পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইং-এর কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পারসন ফ্রম রাখাইন স্টেট’ শীর্ষক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তি অনুষ্ঠানে দুই মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিয়ানমারের কালক্ষেপণের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় (শুক্রবার) বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাধ্য হয়েই ওই বৈঠকে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা ঢাকার পক্ষ থেকে নেপিদোকে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। যদিও এটি নিয়মিত বৈঠক।
তিনি বলেন, এ তালিকাটা এখানে দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমরা তো তাদের (মিয়ানমার) কোনো রকমে নাগালেই পাচ্ছি না। ১০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। মিয়ানমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সেটি দেওয়া হবে।
‘কিন্তু তালিকা দিলেই হবে না। অপরপক্ষ যদি এটি আমলে না নেয় তাহলে আমাদের কী করার আছে। এভাবে চললে আগামী ছয় মাসেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে কিনা, সন্দেহ আছে। ’
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বাংলানিউজকে বলেন, মিয়ানমারের নিয়ত ভালো মনে হচ্ছে না। তাদের কাজ এবং কোথায় কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আবার গণমাধ্যামে সেখানে গণহত্যার প্রমাণসহ খবর বেরিয়ে আসছে। সেটা তো সমস্যাকে আরো জটিল করবে বলে মনে হচ্ছে।
মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে আরো সক্রিয় হওয়া দরকার বলেও মত দেন তিনি।
হুমায়ুন কবীরের ভাষ্য, অন্যান্যরা আমাদের দেশে আসছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে অন্যের দেশে গিয়ে বিষয়টি উত্থাপন করা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে ও পারলে তা আরও বাড়াতে হবে।
‘আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া যে এটা হবে না তা বোঝাই যাচ্ছে। অনেক দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা শুনতে চাইছে না। এ ক্ষেত্রে যারা আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র যেমন সৌদি আরব, তুরস্ক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। কূটনীতি একটি সৃজনশীল পেশা। এখানে সব সময় সুযোগ আছে আবার সব সময় চ্যালেঞ্জ আছে। কূটনীতির কৌশল বদলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে,’ যোগ করেন এই সাবেক কূটনীতিক।
এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে কোনো কর্মকর্তাই কিছুই বলতে চাচ্ছেন না। কারণ হিসেব তারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে কোনো রেসপন্স এখানো পাওয়া যায়নি।
গত ২৬ জানুয়ারি পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও ইউএনএইচসিআর-এর মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক এ সংগঠনটি যে পারিবারিক ইউনিট অনুযায়ী শরণার্থীদের সাহায্য দিচ্ছে সেটির তালিকা সরকারকে দিয়েছে।
সে অনুযায়ী পাসপোর্ট অধিদফতরের করা বায়োমেট্রিক ক্রসচেক করছে সরকার। এর পরপরই চূড়ান্ত তালিকা করে মিয়ানমারের কাছে দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন কার্ডে অধিকাংশ রোহিঙ্গার জন্মস্থান দেখানো হয়েছে মিয়ানমার। জাতীয়তা দেখানো হয়েছে মিয়ানমার।
‘এখানে একটি বড় ক্রটি হয়েছে। কারণ জন্মস্থান বলতে সাধারণত কোনো দেশের জেলার নামই উল্লেখ থাকে। যেমন একজন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জাতীয়তা: বাংলাদেশি, জন্মস্থান: ঢাকা, রাজশাহী বা চাঁদপুর ইত্যাদি হয়ে থাকে। এ বিষয়টি নিয়েও কাজ করতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৮
কেজেড/এমএ