সেতুর মাওয়া অংশে যে ১৪ পিলারের গভীরতা নিয়ে সমস্যা ছিলো, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে নকশা শেষ পর্যায়ে। মাঝনদীতে একই সমস্যার কারণে আরও আটটি পিলারের কাজও সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পদ্মাসেতু নির্মাণ এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তারা জানিয়েছেন, সেতুর কাজের অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, সেতু নির্মাণে ৪০টি পিলারে ২৪০টি পাইল বসবে। ১১৫টি পাইল এরইমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে। অর্ধেক ড্রাইভ হয়েছে আরও ১১টি পাইলের। একেকটি পিলার বা খুঁটিতে ছয়টি করে পাইল সাজানো হয়। চারটি পিলারের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে দু’টি সুপার স্ট্রাকচার বা স্প্যান বসানো হয়ে গেছে। যার ফলে এখন ৩০০ মিটার সেতুর কাঠামো দৃশ্যমান।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তৃতীয় স্প্যানটি ৩৯ এবং ৪০ এর মধ্যে বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ স্প্যানটি মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের তৃতীয় স্প্যানটি তোলা হয়েছে বিশেষ হাইড্রোলিক জ্যাকেও।
এরপর ৪ হাজার টন লিফটিং ক্রেনে টেনে মাওয়া থেকে জাজিরায় ৩৯ এবং ৪০ নম্বর পিলারে নেওয়া হবে স্প্যানটি। প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরত্বে এটি টেনে নিতে ৩-৪ দিন লাগবে বলে মনে করছেন সেতু প্রকৌশলীরা।
৩৮ নম্বর পিলার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে সবশেষ যে স্প্যান বসানো হয়েছে, তার জোড়া (জয়েন্ট) দেওয়ার কাজ চলছে। ওয়েল্ডিং করছেন দেশি শ্রমিকেরা। এ কাজ শেষ হলে ‘ওয়েল্ডিং ফ্রেম’ নিয়ে যাওয়া হবে ৩৯ নম্বর পিলারে। তখন সেখানে তৃতীয় স্প্যান বসানো হবে। এ কাজের প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে পদ্মাপাড়ের সর্বত্র।
সেতু প্রকৌশলীদের দেওয়া তথ্য মতে, তৃতীয় স্প্যান বসতে পারে মার্চের মাঝামাঝিতে। এ মুহূর্তে কোনো চীনা প্রকৌশলী ও শ্রমিক পদ্মাপাড়ে নেই। তাদের সবাই চীনা নতুন বছরের ছুটি কাটাতে স্বদেশে গেছেন। ৪ মার্চের মধ্যে তারা ফিরে আসবেন।
এদিকে, নদীর তলদেশে মাটির গুণাগুণগত বৈচিত্র্যের কারণে এখনও নকশা প্রক্রিয়াধীন আছে ১৪টি পিলারের ৮৪টি পাইলের। এ পিলারগুলো হলো মাওয়ার কাছে ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ এবং জাজিরার কাছে ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫ নম্বর পিলার।
প্রক্রিয়া শুরু করার পর একই সমস্যা ধরা পড়ায় কাজ সাময়িক বন্ধ আছে ১৫, ১৯, ২৪, ২৫, ২৮, ৩৩, ৩৪ ও ৩৬ নম্বর পিলারের।
সেতু নির্মাণে কর্মরত প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড সূত্র জানায়, নদীর মাটির গভীরতা সমস্যার কারণে যে আটটি পিলারের কাজ বন্ধ আছে, সেগুলো নিয়ে নির্দেশনা পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে আটটি পিলারে পাইল সংখ্যা কিছু বাড়বে। আর বাকি ১৪ পিলারের নকশা এখনও আসেনি। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এখানেও বাড়ছে পাইল সংখ্যা। নদীতে ২৪০টি ও মাওয়া-জাজিরার দুইপাশে ৩২টি ট্রানজিশন পাইল-সহ ২৭২টি পাইল ছিলো প্রথম পরিকল্পনায়। এখন দু’দফা ডিজাইন পরিবর্তন হলে পাইল সংখ্যা ছাড়াতে পারে পৌনে ৩শ’।
আগের ১৪টি ও নতুন করে আটটি পিলারের কাজ ঝুলে থাকার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পদ্মাসেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এই পিলারগুলোর নকশা মোটামুটি ফাইনাল হয়ে গেছে। প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেশের বাইরে আছেন। তিনি আগামী ৮ মার্চ এলে চূড়ান্ত নকশা পাওয়া যাবে।
৩১ মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত নকশা দেওয়া না গেলে কাজ আটকা থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন জামিলুর রেজা। তবে তিনি বলেন, এখন যে পাইলের নকশা আছে, সেগুলোর কাজ চলছে, চলতে থাকবে। কাজ আটকে নেই। নতুন স্প্যান দু’একদিনের মধ্যে জাজিরায় নিয়ে যাওয়ার কথা।
সেতুর ওপরের কাঠামো বা স্প্যানের কাজ হয় পদ্মার মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ও চীনে। ৪১টি স্প্যানের দু’টি বসানোর পর এখনও স্প্যান বসানো বাকি ৩৯টি। প্রকল্প অনুযায়ী, ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ স্বপ্নের সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৮
এসএ/এইচএ/