ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অধ্যক্ষ যখন রাতের ক্যাম্পাসের পাহারাদার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৮
অধ্যক্ষ যখন রাতের ক্যাম্পাসের পাহারাদার! কলেজের পাহাড়ায় স্বয়ং অধ্যক্ষ। ছবি: মানজারুল/বাংলানিউজ

বিএল কলেজ থেকে: রাতে কারও মৃদু পদধ্বনির শব্দও শোনা যায় না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে কান পাতলে শোনা যায় চারদিকে নীরব পরিবেশ। দূরের হলের দুই একটি রুমের জানালা দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে। 

লাইট পোস্টগুলোর আলো যেখানে শেষ ভৈরব নদের পাড়ে এমন অন্ধকারে প্রায় ৬ ফুট উঁচু একজন পাহারাদারের টর্চের আলো জ্বলছে।

আলোর কাছে গিয়ে অবাক হওয়ার উপায়! মধ্যরাতে টর্চ হাতে নিজেই ক্যাম্পাসের পাহারাদারের ভূমিকা পালন করছেন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের ঐহিত্যবাহী প্রাচীন বিদ্যাপীঠ সরকারি বি এল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দ সাদিক জাহিদুল ইসলাম।

তার সঙ্গে রয়েছেন কয়েকজন তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী।

রাতের খুলনার বিএল কলেজ।                                          ছবি: মানজারুলএত রাতে প্রহরী থাকার পরও নিজে কেন? এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, স্থানীয় কিছু বখাটের যোগসাজশে কলেজ ক্যাম্পাসে রাতের আধারে কেউ মাদক নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে-এমন খবরে নিজেই তাদের পাকরাও করতে এসেছি।  

‘এছাড়া অনেকে নৈশপ্রহরীকে মানতে চায় না। আমাকে দেখলে ভয় পায়। কয়েকবার হাতে নাতে ধরে পুলিশে দিয়েছি। প্রতিরাতে নিজেই আসি ক্যাম্পাসে টহল দিতে। ’

অধ্যক্ষ সৈয়দ জাহিদুল ইসলামের ভাষ্য, আমি যোগদানের আগে হোস্টেলে (ছাত্রাবাস) গাজা-মদ সবই ছিল। গত ১৫ বছরে হোস্টেলের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ইচ্ছেমতো চলাচল করতো। বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ ছিল ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে। হোস্টেল এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি।  

খুলনা বিএল কলেজের ছাত্রাবাস।  ছবি: মানজারুল ‘ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের কোনো উৎপাত নেই। বৈধ ছাত্ররাই হোস্টেলে থাকে। আতঙ্কের ক্যাম্পাসে এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। ’

তিনি বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে কিছু বহিরাগত এসে ক্যাম্পাসে মাদক বিকি-কিনি করতো। ক্লাস চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসের মাঠে খেলাধুলা ও আড্ডা দিত অনেকে। প্রায়েই মারামারি হতো। বেপরোয়া মোটরবাইক চালাতো বখাটেরা। হোস্টেলে বহিরাগতরা প্রবেশ করতো ও থাকতো। এসব বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি।

‘খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহায়তায় আমরা কলেজ ক্যাম্পসে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান গ্রহণ করেছি,’ বলেন অধ্যক্ষ সৈয়দ সাদিক।  

কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বিমল বলেন, স্যার আসার পর হোস্টেল থেকে মাদক ও অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা এখন ঢুকতে পারে না।

আরও পড়ুন>>
** 
রাতে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ খুবির শিক্ষার্থীরা

হাজী মহসিন হলের শিক্ষার্থী আব্দুল বাতেন বাংলানিউজকে বলেন, আগে ক্যাম্পাসে রাতের আধারে রিকশা রাখার নিরাপদ স্থান তৈরি হয়েছিল। মাদকসহ বখাটেদের রমরমা আড্ডাও ছিল গভীর রাত পর্যন্ত। অধ্যক্ষের নিজের কড়া পাহারাদারীর কারণে এখন এসব বন্ধ হয়েছে।

‘কলেজের ৫টি ছাত্রাবাসে এখন কোনো বহিরাগত প্রবেশ করতে পারে না। মাদকের আড্ডাও চলে না। প্রায় ৬শ’ শিক্ষার্থী সবাই খুব ভালো আছে,’ যোগ করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা,  ফেব্রুয়ারি ২৭ , ২০১৮
এমআরএম/এমএ 
...

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।