মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে সরেজমিনে কুয়েটের পকেট গেল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রাতের স্তব্ধতায় সন্দেহজনক কিছু তরুণ ও যুবকের আনাগোনা। তারা চুপিসারে কেউ কেউ ক্যাম্পাসে ঢুকছেন, আবার কেউ বের হচ্ছেন।
প্রশাসন ভবন ও কুয়েটের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মধ্যবর্তী পদ্মপুকুর পাড়ে ছোটো ছোটো গাছপালা ঘেরা মনোরম পরিবেশে রাতের আঁধারে দেখা মেলে আড্ডারত শিক্ষার্থীদের। পানির ট্যাংকের উত্তর ও পূর্বপাশের নিরিবিলি জায়গায় বসে থাকা ১০/১৫ জন নিঃশব্দে আড্ডা দিচ্ছেন। কিছুটা দূর থেকে হেঁটে গেলেই পাওয়া যায় গাঁজার গন্ধ।
পকেট গেটের সামনের এক চায়ের দোকানদার জানান, পকেট গেটটি সারারাত খোলা থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র নেতার পরোক্ষ মদদে এই ব্যবসা পরিচালিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করতে পারছে না তাদের। এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই তাদের। মূলহোতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে এ ব্যবসা চলছে বলে জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফলে মাদকমুক্ত হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
জানা গেছে, কুয়েটের লালন শাহ হল, অমর একুশে হল, ফজলুল হক হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, ড. এম এ রশিদ হল ও খান জাহান আলী হলের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে এসব মাদকসেবীদের কারণে বিব্রতকর অবস্থায় থাকতে হয়।
আরও পড়ুন>>
**অধ্যক্ষ যখন রাতের ক্যাম্পাসের পাহারাদার!
**রাতে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ খুবির শিক্ষার্থীরা
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১২ এর যুগ্ম সচিব ফরিদ আহম্মাদ স্বাক্ষরিত ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে খুলনার দু’টি পাবলিক এবং দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ মাদক ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া উল্লেখ করা হয়েছে।
সে তালিকা অনুযায়ী কুয়েটে মাদক বিক্রেতা ও সরবরাহকারীদের মধ্যে রয়েছে গিলেতলার দক্ষিণপাড়ার আবু হানিফের স্ত্রী শাবানা বেগম, একই এলাকার আজমত আলীর ছেলে নূরে আলম খান, গিলেতলা মীরপাড়ার রজব আলীর খাঁর ছেলে মো. জামাত খাঁ, ফুলবাড়ীগেটের বাদশা মিয়ার স্ত্রী বিলকিস, রংমিল গেটের ইউসুফ হায়দারের স্ত্রী রেখা, গাবতলার সৈয়দ মোশারেফের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল, একই এলাকার বাবুল মীরের ছেলে টুকু মীর, মীরেরডাঙ্গার শেখ আবদুল জলিলের ছেলে শেখ মোহাম্মদ এমদাদুল হক, ফুলতলা উপজেলার মশিয়ালী পূর্বপাড়া গ্রামের মো. ইসলাম শেখের ছেলে মো. রাজিব শেখ ও একই গ্রামের নূরু শেখের ছেলে রাজু শেখ।
প্রতিবেদনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে- ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা সরবরাহের ফলে দেশের অর্থনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি শিক্ষার্থীদের মেধা নষ্ট হচ্ছে। মাদক বিকিকিনি ও এর অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলাদলি, কোন্দল, ছুরিকাঘাত, খুন ও মারধরের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে।
কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী জানান, রাতে কুয়েটে মাদক বিকিকিনির ঘটনা ‘ওপেন সিক্রেট’র মতো। কুয়েটের মধ্যে পুলিশের গাড়ি টহল দিতে পারে না এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির মাদক ব্যবসায়ী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ রশিদ হল, ফজলুল হক ও বঙ্গবন্ধু হলে মাদক সেবন চলে প্রকাশ্যে। সন্ধ্যার পর এ হলগুলোতে গেলে গাঁজার গন্ধ থাকে ভরপুর।
কুয়েট সংলগ্ন খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লিয়াকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, কুয়েটে পুলিশের কোনো টহল থাকে না। যদি কোনো মাদক ক্যাম্পাসে ঢোকে তাহলে ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
এমআরএম/আরআর