রোববার (২২ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সাড়ে ৮টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টায়) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীরা।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান লন্ডনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল কাওনাইন।
এর আগে সৌদি আরবে গাল্ফ শিল্ড ওয়ানের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ৬ দিনের সফরে সোমবার (১৬ এপ্রিল) মধ্য রাতে লন্ডন আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ক্ল্যারিজ হোটেলে অবস্থান করেন।
সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদান ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ ব্রিটেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মেসহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হন।
গত জাতিসংঘ সম্মেলনের মতো কমনওয়েলথ সম্মেলনেও নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরব ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারের কমনওলেয়থ সম্মেলনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সফলতা রোহিঙ্গা ইস্যুতে কমনওয়েলথ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের ঐকমতে নিয়ে আসা।
ফলাফল হিসেবে কমনওয়েলথের লন্ডন ঘোষণায় গুরুত্ব পায় রোহিঙ্গা সংকট। ঘোষণার ৫০ অনুচ্ছেদে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী অপরাধীদের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করারও তাগিদ দেয় কমনওয়েলথ।
সফরের প্রথম দিন মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ ওমেনস ফোরামে প্রধান বক্তা হিসেব মূল বক্তব্য রাখেন। সেখানে বিশ্ব শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নকে মূল স্তম্ভের ওপর দাঁড় করিয়ে আমরা ভবিষ্যতের দারিদ্র্য, বৈষম্যহীন ও সংঘাত মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
এদিন বিকেলে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও মানবিক ইস্যুতে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ, টেকসই এবং দ্রুত সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কার্যকর ও বাস্তব কোনো কিছুই করছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির গল্প তুলে ধরেন বিশ্ব নেতাদের কাছে।
সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার (১৮ এপ্রিল) সকালে কমনওয়েলথ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এশিয়াকে আরো শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও স্থিতিশীল করতে পারস্পরিক সেতুবন্ধন, যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে জনগণের সঙ্গে জনগণের মতবিনিময় ও বোঝাপড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে এ অঞ্চলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিকেলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র (Theresa May) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘সরকার প্রধানদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতাদের গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
রাতে যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে বাকিংহাম প্যালেসে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অংশগ্রহণে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
এদিন কমনওয়েলথ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কয়েকটি এক্সিউটিভ সেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও দ্বি-পাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
রাতে বাকিংহামে প্যালেসে রানীর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২০ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিট্রিট সেশনের তিনটি এক্সিকিউটিভ সেশনে অংশ নেন। রিট্রিট সেশনের সমাপনী পর্বে কমনওয়েলথ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে লন্ডন ঘোষণায় রোহিঙ্গা নিপীড়নকারীদের বিচার চাওয়া হয়।
শনিবার (২১ এপ্রিল) লন্ডন সময় বিকেলে ওয়েস্টমিনিস্টার সেন্টার হলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি লন্ডন আদালতে দণ্ডিত, পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেভাবেই হোক তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো হবে।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
গত ১৫ এপ্রিল সৌদি আরব ও লন্ডন সফরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮
এমইউএম/আরএ