বাংলাদেশে সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী পরিচালক জেমস গোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের বৈঠকে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বের হয়ে যান মাহবুব তালুকদার।
মাহবুব তালুকদারের বয়কটের ব্যাপারে তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনে কখনও কখনও দ্বিমত হতেই পারে। এটাই যে শেষ তা না। কাজেই এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার।
তিনি আরও বলেন, মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনার, তিনি বয়কট করেছেন। আমরা যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলাম, তার মধ্যে বিভিন্ন দল নাম দিয়েছিল। মাহবুব তালুকদারের নাম তো বিএনপি থেকে এসেছিল। কে বিএনপি, কে আওয়ামী, নির্বাচন কমিশন- এটা আমরা মনে করি না। সবাই নিরপেক্ষ। সেই হিসেবে তারা এখানে দক্ষতার উপর ভিত্তি করে নিযুক্ত হয়েছে। এটা (বয়কট) আমার জানা নেই। আর এ সম্বন্ধে আমি মন্তব্য করতে চাই না।
ইভিএম কেন আনছেন- প্রশ্নে তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটা তো পার্সিয়াল। আমেরিকা, ভারতে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে ১০০ আসনে ইভিএম হবে। সিলেট, রাজশাহীতে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে, কোনো জায়গায় আওয়ামী লীগ, কোনো জায়গায় বিএনপি জিতেছে। নির্বাচন কমিশন যেদিন থেকে গঠিত হয়েছে সেদিন থেকে বিএনপি বা তার জোট নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে। এটা তাদের নেগেটিভ অ্যাটিচ্যুইড।
‘সুতরাং নির্বাচন কমিশনের এটা (ইভিএম ব্যবহার) অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, আমরা মনে করি যে এটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। ৩০০ আসনের জায়গায় ১০০ আসন, এটা পৃথিবীর বহু দেশে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন হয়েছে। ’
বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, নির্বাচনের পর বিতর্ক হয়নি এমন দেশ নেই। বাংলাদেশেও নির্বাচন পরবর্তী সময়গুলোতে বিতর্ক হয়েছে। আমরাও বলেছি, বিএনপিও বলেছে। আগামীতেও এরকম বলবে, অসুবিধা কী? তবে আমি মনে করি যে নির্বাচনটা সঠিকভাবেই হবে। নির্বাচনের আগে অনেক কিছুই হওয়ার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু কোনোটাই সফল হবে না, ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হবে।
আগামী ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ একাদশ জাতীয় সংসদের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জোট গঠন প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন বলেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ, তারা তারিখ দেবে। সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। এখানে কেউ রাজনৈতিক ঐক্য গঠন করতে পারে। ড. কামাল হোসেন বা বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যদি জোট হয় এবং তারা যদি বিএনপির সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে, ঐক্য করে আমাদের কোনো বিরোধিতা নেই। একটা গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন দল ঐক্য করতেই পারে।
‘কিন্তু লক্ষ্য থাকবে নির্বাচন বানচাল করার যদি কেউ ষড়যন্ত্র করে তখন সরকার নীরব থাকবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করবে না। যেটা করেছিল ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫-তে জ্বালাও পোড়াও, অগ্নিসংযোগ, মায়ের কোলে নিষ্পাপ বাচ্চাকে হত্যা করা, পেট্রোল নিক্ষেপ করে গাড়ির ড্রাইভারকে হত্যা করা। ১৪ সালের নির্বাচনের আগে পাঁচজন প্রিজাইডিং অফিসার ও ২৪ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করা, ৫০০ পুলিং বুথ পুড়িয়ে দেওয়া- এই সুযোগ কোনোমতেই কাউকে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ’
তোফায়েল বলেন, যদি কোনো দল নির্বাচনে না আসে সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু কারো জন্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকে থাকেনি, সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থনে হয়েছে। এ বারের নির্বাচনও কারো জন্য থেমে থাকবে না, নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে, সংবিধান অনুসারে বর্তমান সরকারের অধীনে এবং সেই নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৮
এমআইএইচ/আরআর