সুদূর আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া থেকে আমদানি হওয়া এই মাদক দেশের বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছিল একটি চক্র। এছাড়া নতুন মোড়কে ভরে ‘গ্রিন টি’ হিসেবে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে পাচার করে আসছিল।
নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস (এনপিএস) বা ‘খাত’ ইয়াবার (মেথাএমফিটামিন) মতোই স্টিমুলেন্ট ড্রাগ। যা মূলত চিবিয়ে বা পানিতে গুলিয়ে চায়ের মতো খাওয়া হয়। খাওয়ার পর ইয়াবার মতোই ক্লান্তি না আসা, ঘুম না হওয়াসহ শারীরিক বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
শুক্রবার (৩১ আগস্ট) দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একাধিক অভিযানে ৮৬১ কেজি খাতসহ মো. নাজিম নামে একজনকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। আটককৃত খাতের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা।
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র সহযোগিতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদারের নেতৃত্বে একটি টিম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪৬৭ কেজি খাত জব্দ করে। পরে শান্তিনগর এলাকা থেকে এই চালানের মালিক নাজিমকে গ্রেফতারসহ তার হেফাজত থেকে আরো ৩৯৪ কেজি খাত উদ্ধার করা হয়। খাতগুলো ইথিওপিয়া থেকে অন্তত চার-পাঁচটি দেশ ঘুরে বাংলাদেশে আসে।
অভিযানের বিষয়ে অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ২৩ আগস্ট থেকেই আমাদের এই অভিযান শুরু হয়। চালানটি ইথিওপিয়া থেকে সিঙ্গাপুর, দুবাই হয়ে ২৭ আগস্ট ঢাকায় আসার কথা ছিল। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের যে ফ্লাইটে করে ২৭ আগস্ট ঢাকায় আসার কথা ছিল সেই ফ্লাইট ঢাকায় এলেও চালানটি আসেনি। চোখ ফাঁকি দিতে চালানটি মালয়েশিয়া, ভারত, পরে আবার সিঙ্গাপুর, দুবাই ঘুরে ৩০ আগস্ট ইতিহাদ এয়ারওয়েজের আরেক ফ্লাইটে করে ঢাকায় আসে।
ততোদিনে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চালানের প্রাপক নাজিমকে চিহ্নিতসহ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা শাখা। পরে চালানের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর শুক্রবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৬৭ কেজি খাত জব্দ করা হয়। ওইদিন রাতেই শান্তিনগর এলাকায় ‘নওশিন এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি অফিস থেকে মো. নাজিমকে গ্রেফতারসহ ৩৯৪ কেজি খাত উদ্ধার করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে চালানের কাগজে নওশিন এন্টারপ্রাইজের পরিবর্তে ‘নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজ’ লেখা ছিল। এছাড়া চালানের তারিখে ৩০ আগস্ট থাকলেও সাল উল্লেখ করা ছিল ২০১৬।
গ্রেফতার নাজিমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ওই কর্মকর্তা আরো জানান, নাজিম আগে কাজের সূত্রে দুবাই ছিলেন। সেখানে ইথিওপিয়ার এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখানে ওই ব্যক্তির সঙ্গে খাত আমদানি করে আবার বিদেশে পাচারের চুক্তি হয়। এরপর দেশে ফিরে কয়েকমাস ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন তিনি।
দেশে এই মাদক নতুন বলে এর বাজার অল্প, মূলত রফতানির উদ্দেশ্যেই এগুলো আমদানি করা হতো। ঢাকায় এনে এক/দেড় কেজি করে নিজস্ব ব্র্যান্ডের চায়ের প্যাকেটে ভরা হতো। এরপর গ্রিন-টি হিসেবে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে পাঠাতো নাজিম। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী দেশের বাজারে প্রতিকেজি ১৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করতেন। তিনি এ পর্যন্ত ৪-৫টি চালান দেশে এনেছেন এবং দু’টি চালান বিদেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশে আরো বেশ কয়েকজন এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন নাজিম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, গ্রিন টি’র মোড়কে এই মাদক আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি নতুন মোড়কে বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে বিদেশে রফতানি করা হচ্ছিল। এ চক্রে নাজিমের সঙ্গে আরো কেউ জড়িত রয়েছেন কি-না তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৮
পিএম/জেডএস