ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মরদেহ গুম করে সাজলেন সাক্ষী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
মরদেহ গুম করে সাজলেন সাক্ষী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পারিবারিক কোন্দলের জেরে স্ত্রীকে খুন করেন গাজীপুরের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া। তখনই তাকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন বন্ধু খোকন মিয়া ও মুকুল মিয়া। তিন বন্ধু মিলে ঘটনা ধামাচাপা দিতে গভীর রাতে বাড়ির পাশের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন মরদেহ। 

বন্ধুকে সহায়তা করার জন্য আর্থিক সাহায্য নিলেও পরে ঘটনার সাক্ষী বনে যান খোকন ও মুকুল। তারাই স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে গিয়ে বন্ধুর কুকর্মের কথা বলেন।

রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় শাহজাহান তার স্ত্রীর মরদেহ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিতে দেখেছেন বলেও জানান তারা।

এরপর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সপ্তাহ পার হতেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১। মূল আসামি শাহজাহানসহ আটক করেন সহযোগী খোকন ও মুকুলকে।  

গত ৩ জানুয়ারি গাজীপুরের ভাওরাইদ এলাকার নিজ বাসায় স্ত্রী আফরোজা বেগমকে (২৬) শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন শাহজাহান। এরপর এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) রাতে ডেমরা এলাকা থেকে তিনজনকে আটক করে র‌্যাব-১।

শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম। আটক শাহজাহান মিয়া, খোকন মিয়া ও মুকুল মিয়া।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, ৮ বছর আগে সুতার মিলে কাজ করার সময় শাহজাহান ও আফরোজার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার শুরু করলেও তাদের পারিবারিক জীবনে কলহ লেগে থাকতো। বিভিন্ন সময় স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করতেন শাহজাহান। ২০১৬ সালে আফরোজা কাজের উদ্দেশে সৌদি আরবে যান এবং গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ফিরে আসেন।

স্ত্রীর কাছে বিদেশে অর্জিত টাকার হিসাব চাইলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। গত ৩০ ডিসেম্বর আফরোজা ভোট দিতে গেলে বাড়ি ফেরার পর কোথায় গিয়েছিল জানতে চেয়ে তাকে মারধর করে শাহজাহান। ৩ জানুয়ারি সকালে বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে তাদের একমাত্র মেয়েকে পাশের ঘরে রেখে স্ত্রী আফরোজাকে গলা টিপে হত্যা করে শাহজাহান। এরপর খাটের নিচে মরদেহ লুকিয়ে রাখেন।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, এ অবস্থায় সাহায্য করার জন্য বন্ধু খোকন ও মুকুলকে বাসায় ডাকেন শাহজাহান। তিনজন মিলে ওইদিন রাতে বাসার পাশে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন আফরোজার মরদেহ। এজন্য শাহজাহানের কাছ থেকে খোকন ৪ হাজার এবং মুকুল ২ হাজার ৫০০ টাকা নেন।

টাকা নিয়ে খোকন ও মুকুল ভাবে ঘটনার জানাজানি হয়ে গেলে তারা ফেঁসে যেতে পারেন। তাই নিজ থেকে স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানান। তারা বলেন, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শাহজাহানকে সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ ফেলতে দেখেছেন। এরপর মরদেহ উদ্ধার হলে খোকন ও মুকুল হয়ে যান ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। ঘটনার পর থেকেই শাহজাহান পলাতক ছিলেন।

পরে তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার মূল অভিযুক্ত শাহজাহান এবং সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে খোকন ও মুকুলকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান সারোয়ার বিন কাশেম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
পিএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।