ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সরিষা ফুলের মধু আহরণে মৌচাষিরা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
সরিষা ফুলের মধু আহরণে মৌচাষিরা সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষিরা। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: শীতকালীন শস্য সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষিরা। বর্তমানে সরিষা ক্ষেতে এ মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছি। 

মধু সংগ্রহে জন্য স্টিল ও কাঠ বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বাক্স। যার ওপরের অংশটা মোড়ানো কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে।

বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি আটটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো এক ধরনের সিট বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে। পরে বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে।
 
মৌমাছিতে টুইটম্বর বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের লাগোয়া স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সেই সব বাক্স থেকে সরিষা ক্ষেতের ফুলে ফুলে ভো ভো শব্দ তুলে ঢু মারতে থাকে প্রশিক্ষিত মৌমাছিরা। এভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চলে আসে বাক্সে।
 
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে পাবনা থেকে এসেছেন আবেদ আলী, ছানোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন মৌচাষি। আলাপচারিতায় সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন এসব তথ্য। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত এক মৌচাষিরা।  ছবি: আরিফ জাহান
প্রতি বছরের এ সময়টাতে তারা এভাবে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। একই ধারাবাহিকতায় এবারো সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন তারা।
 
পাবনার গুয়াখার গ্রামের বাসিন্দা মৌচাষি আবেদ আলী বাংলানিউজকে জানান, তারা কয়েকজন মিলে নন্দীগ্রাম উপজেলায় মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। উপজেলার ভাটরা গ্রামের পুনাইল গ্রামের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ১৮০টি বাক্স বসিয়েছেন তারা। এসব বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় সাড়ে ৩০০ কেজির মতো মধু পাওয়া যাচ্ছে- যোগ করেন আবেদ আলী।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিজরুল, ভাটগ্রাম, কাথম, জামালপুর, পুনাইল, চাঁনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষকৃত সরিষা ক্ষেতে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মধু সংগ্রহকারীরা। সরিষা ক্ষেত লাগোয়া খালি জমিতে সারিসারি বাক্স বসানো হয়েছে। দলে দলে উড়ছে মৌমাছি। দল বেঁধে বা দলছুট হয়ে মৌমাছিগুলো সরিষা ক্ষেতে ভো ভো শব্দে উড়ে বেড়াচ্ছে। ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে ফিরে যাচ্ছে সেই বাক্সে।
 
মৌচাষিরা জানান সরিষা ফুলের মধু রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররাও ক্রয় করেন। চাহিদা অনুযায়ী মধু বিক্রি করেন তারা। চাহিদা বেশি হলে দাম কিছুটা বেশি পান। আবার তুলনামূলক চাহিদা কম হলে দামও কিছুটা কম পান।

তবে প্রতিকেজি  সরিষা ফুলের মধু পাইকারি ২৫০-৩০০ টাকা দরে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান মৌচাষিরা।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বাবলু সূত্রধর বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ২৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এসব সরিষা ফুল থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে।
 
তিনি জানান, সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো। সরিষা ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল থাকে না। একেবারে খাঁটি। আর এভাবে অনেকটা সহজ প্রক্রিয়ায় মধু আহরণের মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে পারেন সংশ্লিষ্টরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
এমবিএইচ/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।