সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অনুমোদনের জন্য সোমবারই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা ১১ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বাইরে অভিজিৎকে হত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে শফিউর রহমান ফারাবী নামে আরেকজনের বিরুদ্ধে। এ কারণে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
‘হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ১১ জনের মধ্যে আমরা সবার নাম ঠিকানা পাইনি। ৬ জনের নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা চার্জশিট দিচ্ছি। ’
তিনি জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হচ্ছে- মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, আরাফাত রহমান শামস এবং আবু সিদ্দিক সোহেল। এই তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
যে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট:
অভিজিৎ হত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চার্জশিটে হয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পলাতক চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার নাম। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিজিৎ হত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় ফারাবীর নামও রয়েছে চার্জশিটে। গ্রেফতার সায়মন, সোহেল ও আরাফাতের নামও রয়েছে চার্জশিটভুক্ত ছয়জনের মধ্যে। নাম রয়েছে পলাতক আকরাম হোসেন ওরফে আবিরের।
কিলিং মিশনে অংশ নেয় ১১ জন:
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিজিৎ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক। বর্তমানে সে পলাতক। তার নেতৃত্বে মোট ১১ জন এই কিলিং মিশনে অংশ নেয়।
তিনি জানান, কিলিং স্কোয়াডে প্রধান ছিল মুকুল রানা, সে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। আর অভিজিৎ খুনের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল সায়মন, সোহেল এবং আরাফাত। এই তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাদের গ্রেফতার করা হলে পরে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে।
হত্যার ৬ দিন আগে থেকে অভিজিৎকে অনুসরণ:
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, যেহেতু অভিজিৎ রায় বিদেশে থাকতেন, কবে দেশে আসবেন সেই তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে কিলাররা। অভিজিৎ দেশে ফেরার পর ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে জঙ্গিরা তাকে অনুসরণ করতে থাকে। ২২ ফেব্রুয়ারি জাগৃতি প্রকাশনীর সামনে অভিজিৎকে তারা দেখে। সেখান থেকে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান অভিজিৎ। জঙ্গিরা ওই পর্যন্ত তাকে ফলো করে কিন্তু সেদিন তারা কিলিং মিশন সফল করতে পারেনি।
‘পরে ২৩ থেকে ২৫ তারিখ (ফেব্রুয়ারি) পর্যন্তও তারা অভিজিৎকে অনুসরণ করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি তারা হত্যাকাণ্ডটি ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুসারে তারা ঘটনার দিন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। তাদের মূল অপারেশনাল হাউজ ছিল ধানমণ্ডিতে। ’
মনিরুল বলেন, অভিজিৎ হত্যায় রেকির দায়িত্বে ছিল সায়মন ও সোহেল রানা। এছাড়া শেষ দিকে হত্যাকারীরা সবাই রেকি করেছিল। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের আশেপাশে মেজর জিয়া ও সেলিম নামে আরেকজন সহযোগী ছিল।
মিশন সফল করতে ইন্টেলিজেন্স ও কিলার গ্রুপ:
সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, এ ধরনের মিশনের ক্ষেত্রে আনসার আল ইসলামের সেন্ট্রাল লিডাররা টার্গেটের তালিকা করে হাই কমান্ডে জমা দিত। তারপর হাই কমান্ড থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো হত্যাকাণ্ড কিভাবে ঘটানো হবে! এসব কিলিং মিশনে দুইটি গ্রুপ কাজ করতো একটি ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ তারা রেকি করা থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতো। আরেকটি গ্রুপ হচ্ছে কিলার গ্রুপ; তারা কিলিং মিশন সফল করতো।
সংবাদ সম্মেলনে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯
ডিএসএস/এমএ