তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া বাংলাদেশিরা নির্যাতন নিপীড়নের যে ভয়াবহ বর্ণনা দেন সেগুলো মেনে নেওয়া কঠিন। শুধু চুনোপুটিদের ধরে মানবপাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়, ধরতে হবে রাঘববোয়ালদের যারা দেশে বিদেশে বসে আছে।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত মানবপাচার বিষয়ক এক পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) আবু বকর ছিদ্দীক, ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক আসিফ সালেহ।
কাজী রিয়াজুল হক আরও বলেন, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা পরষ্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি ছাড়া অন্যটি হতে পারে না।
তিনি বলেন, অনেক সময় তথ্য না জানার কারণে মানুষ পাচারের শিকার হয়। অনেকে ভাষা জানে না। যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের যাওয়ার আগেই যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত পুলিশকে আরও সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি পাচারের শিকার কাউকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়ার কাজটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রয়োজনে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করতে হবে।
অনুষ্ঠানের মানবপাচার বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী, ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে পাচারের শিকার ব্যক্তিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন।
ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, মানবপাচার শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের জন্যই সমস্যা। এ ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল গঠন হতে পারে একটা কার্যকরী উদ্যোগ। অভিবাসন সমস্যাসহ সামাজিক যেকোনো ইতিবাচক পরিবর্তনে ব্র্যাক বদ্ধপরিকর এবং সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে ব্র্যাক।
অনুষ্ঠানের মানবপাচার বিষয়ক মূল প্রবন্ধে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। ২০১২ সালে মানবপাচার আইন হওয়ার পর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৭১৬টি মামলা হলেও নিষ্পত্তির ঘটনা খুবই নগন্য। পাচার রোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত কয়েকবছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রম অভিবাসনের নামেও পাচার বাড়ছে। মানবপাচার বিষয়ক মামলাগুলোর নিষ্পত্তি করতে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এজন্য সরকারের নির্ধারিত বাজেট দেওয়া উচিত। অন্ততপক্ষে যেসব জেলায় মামলা বেশি এমন পাঁচটি জেলায় হলেও সরকার ট্রাইব্যুনাল করুক।
বংলাদেশ সময়: ০৭০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৯
জিসিজি/আরআইএস