ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রায়গঞ্জে হাজার বছরের প্রাচীন নগরীর সন্ধান

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
রায়গঞ্জে হাজার বছরের প্রাচীন নগরীর সন্ধান প্রাচীন উঁচু ঢিবির পাশে শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: মহাভারতে উল্লেখিত বিরাট রাজার মহল ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পেয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। 

প্রাথমিক গবেষণা শেষে তারা ধারণা করছেন ৮০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের একটি সমৃদ্ধ নগরী ছিল এটি। আড়াই হাজার বছর আগে মহাভারতে বর্ণিত বিরাট রাজার প্রাসাদ ছিল এই অঞ্চলেই।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের খিরিতলা ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতে অন্তত অর্ধশতাধিক উঁচু ঢিবির সন্ধান পাওয়া যায়। যেগুলো বহু প্রাচীন আমলের ইট দিয়ে তৈরি এক একটি মন্দির ছিল।  

প্রাচীন উঁচু ঢিবির পাশে শিক্ষার্থীরা।  ছবি: বাংলানিউজমঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দিনভর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. রিফাত-উর-রহমানের তত্ত্বাবধানে প্রথম বর্ষের ৩৮ জন শিক্ষার্থী খিরিতলা গ্রামের পরিত্যক্ত উঁচু ঢিবি ও এর আশপাশের ধ্বংসস্তুপ নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বিভাগের অপর শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।  

প্রাচীন আমলের ইট।  ছবি: বাংলানিউজরবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রভাষক রিফাত-উর-রহমান বাংলানিউজকে বলেন, খিরিতলা গ্রামে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ঢিবিটাকে স্থানীয়রা রাজার বাড়ি বলে অভিহিত করেন। ঢিবিতে প্রাচীন কালের ইট নির্মিত স্থাপনার ভগ্নাংশ দৃশ্যমান। ঢিবিসংলগ্ন কৃষি জমিতে হাঁটলে প্রচুর পরিমাণে মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ চোখে পড়ে। ঢিবিতে পাওয়া পোড়ামাটির চিত্রফলক দেখে ধারণা করা যায় এগুলি গুপ্ত পরবর্তী যুগের। এখানে গুপ্ত আমলের একটি মুদ্রাও পাওয়া যায়। এ থেকে অনুমিত হয় এ স্থানটি গুপ্ত কিংবা পাল আমলের একটি সমৃদ্ধ জনপদ।  

এখানে অবস্থিত প্রায় ৫০টি ঢিবির মধ্যে লুকায়িত আছে মন্দির এবং স্তুপাদির ধ্বংসাবশেষ। পাল আমল পর্যন্ত গৌরবের সঙ্গেই হয়তো এই জনপদ টিকে ছিল।  

মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ হাতে শিক্ষার্থীরা।  ছবি: বাংলানিউজতিনি আরও বলেন, ১৯৯০ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ জেলা গেজেটিয়ার পাবনা’ সূত্রমতে নিমগাছি অতি প্রাচীন স্থান। এটিকে মহাভারতে বর্ণিত বিরাট রাজার শহর বলে অভিহিত করা হয়। প্রাচীন করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে প্রায় ৮ বর্গমাইল আয়তনের একটি নগরীর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এখানে।  

দেশবরেণ্য প্রত্নতাত্ত্বিক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া ১৯৮৪ সালে তাঁর বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, মহাভারতে বর্ণিত মাৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজপ্রাসাদ ছিল এ অঞ্চলে। নৃত্যশীলা, কীচক স্থান, বুরুজ ইত্যাদি নামে অন্যান্য ঢিবিগুলি পরিচিত। পান্ডবেরা অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন এখানে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। প্রমাণস্বরূপ একটি প্রাচীন বৃক্ষকে মহাভারতে বর্ণিত শমীবৃক্ষ ও একটি স্থানকে বিরাট রাজার গো-গৃহ বলে চিহ্নিত করা হয়।  

রিফাত-উর-রহমান আরো বলেন, এই ঢিবিসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার এখনো সুযোগ রয়েছে। প্রাথমিক জরিপে বেশ কিছু মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ এবং ইটের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।