একই অবস্থা হাওয়া বেগমেরও। তার বাড়ি কামালপুর গ্রামে।
ভাঙনের পর কোনোভাবে আগের মতো আর গুছিয়ে ওঠা হয় না তাদের। তার আগেই আবার ভাঙন এসে উপস্থিত হয়। বলা যায়, সাহেরাদের সুখ যেন সইতেই পারে না যমুনা নদী।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যায় বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন সাহেরা বেগম। বাঁধের কুতুবপুর অংশে তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে মাটির চুলায় দুপুরের খাবার রান্না করছিলেন তিনি। রান্নার ফাঁকে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় বয়স পঞ্চাশের সাহেরা বেগম বলেন, কুতুবপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের শেষ দিকে ছিল আমার ভিটা। যমুনার ভাঙনের শিকার হয়ে একাধিকবার বসতবাড়ির স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। এবার কী হবে তা বন্যার পানি নেমে গেলে বুঝতে পারব।
‘এক সময় সাংসারিক অবস্থা অনেক ভালো ছিল। আবাদ করার মতো জমি ছিল। জমিতে ভালো ফসল হতো। ফসল বিক্রি করে বেশ ভালোভাবেই চলতো সংসার। কিন্তু কপালে সুখ বেশি দিন সইলো না। যমুনা গিলে নিল বসতভিটা। আশ্রয় হলো বাঁধে। ’
তিনি জানান, দেড় যুগের অধিক সময় ধরে সংগ্রাম করে টিকে আছেন তিনি ও তার স্বামী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে তাদের। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে আর ছেলেরা আলাদা থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মৌসুমী বৃষ্টির ফলে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ১২৫টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। এতে এসব গ্রামের ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় দুই হাজারের মতো পরিবার। এছাড়া বসতবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন উঁচু ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে আরও প্রায় ২০ হাজার পরিবার। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বন্যা দুর্গত এসব পরিবারের মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুরে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বাংলানিউজকে জানান, যমুনা পয়েন্টে পানি এক সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আসলাম আলী বাংলানিউজকে জানান, তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। যা পেতেন তাতে তার সংসার চলতো। কিন্তু এখন কোনো কাজ নেই। ঘরে যতটুকু চাল-ডাল ছিল তাও প্রায় শেষ। বন্যার পানি নেমে না যাওয়া অবধি তাকে পুরোপুরি বেকার থাকবে হবে। এ অবস্থায় সামনের দিনগুলো কীভাবে পাড়ি দেবেন তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
মুক্তার হোসেন নামের আরেক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, সামান্য জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন তিনি। তাও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সংসারের আয়ের পথ বর্তমানে বন্ধ। বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। নেই পয়োনিষ্কাষণেরও কোনো ব্যবস্থা। তাই বাঁধে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
এমবিএইচ/এইচএডি