ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্যে ফের তৈরি হচ্ছে পোল্ট্রি ফিড

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯
বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্যে ফের তৈরি হচ্ছে পোল্ট্রি ফিড ট্যানারি বর্জ্য থেকে পোল্ট্রি ফিড তৈরি হচ্ছে সাভারেও। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: স্থান বদলেছে, ঘটনা বদলায়নি। আগে হাজারীবাগে বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে তৈরি হতো পোল্ট্রি ফিড, এখন হচ্ছে সাভারে। ট্যানারিগুলো স্থানান্তরিত হওয়ার পর একই ভাবেই তৈরি হচ্ছে পোল্ট্রি ফিড, ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত বর্জ্য।

গত এক দশকে দেশে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস-মুরগি পালন বেড়েছে। এটি এখন বেশ লাভজনক ব্যবসা হিসেবেই পরিচিত।

আর হাঁস-মুরগির খাবার (পোল্ট্রি ফিড) তৈরি করে এসব খামারে সরবরাহ করাটাও লাভজনক। দেশে বছরে পোল্ট্রি ফিডের চাহিদা প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন। প্রতি কেজির দাম গড়ে ৪০ টাকা হিসাবে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পোল্ট্রি ফিড বেচাকেনা হয়। এ খাবারের জোগান দিচ্ছে নিবন্ধিত ২১৮টি প্রতিষ্ঠান।

তবে, কিছু কোম্পানির পোল্ট্রি ফিডে এখনো মিলছে বিষাক্ত ট্যানারির বর্জ্য। চামড়ার বর্জ্যের ক্ষতিকর উপাদানগুলো দিয়ে মাছ ও মুরগির খাবার তৈরি হচ্ছে। এসব খাবার খাওয়ানোর ফলে বিষাক্ত হয়ে পড়ছে মাছ-মুরগিও।

আগে হাজারীবাগ এলাকা তৈরি পোল্ট্রি ফিডে ট্যানারি বর্জ্য পাওয়া গিয়েছিল। সাভারে স্থানান্তরের পরও অবস্থা বদলায়নি। চলতি বছরেই তিনটি পোল্ট্রি ফিড সরবরাহকারী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করেছে প্রাণী সম্পদ অধিদফতর।

সূত্র জানায়, সাভার এলাকায় তিনটি পোল্ট্রি ফিড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৫ হাজার টন ট্যানারি বর্জ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সাভারের ভার্কুতাতেই এক লাখ টন, আমিনবাজারে দুই হাজার টন ও ভার্কুতা মোগড়াকান্দায় তিন হাজার টন বর্জ্য পাওয়া যায়।  

রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পকে ঘিরে এর আশপাশে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য বিষাক্ত পোল্ট্রি ফিড তৈরির কারখানা। সম্প্রতি, এসব ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়েছে। হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামে গড়ে ওঠা চামড়া শিল্প নগরীর একেবারে উত্তর প্রান্ত ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বর্জ্য পোড়ানোর খামারগুলো। বর্জ্য পোড়াতে সেখানে প্রায় ৪০টির মতো চুলা রয়েছে। আর সেখানেই তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত পোল্ট্রি ফিড।

হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরিত হয়েছে ট্যানারিগুলো।  ছবি: বাংলানিউজ

অসাধু ব্যবসায়ীরা কখনও গোপনে, কখনও প্রকাশ্যেই ট্যানারির বর্জ্য জ্বালিয়ে বিষাক্ত পোল্ট্রি ফিড তৈরি করে দেশের বিভিন্ন এলাকার খামারে সরবরাহ করছে। এসব ফিডে থাকছে ট্যানারির চামড়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিক ক্রমিয়াম, সালফিউরিক অ্যাসিড, লাইম, সোডা, ফরমিকা, ক্লোরাইড, সালফেট, অ্যালুমিনিয়াম সালফেট প্রভৃতি। এসব বিষাক্ত উপাদান মুরগি ও মাছের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে মানব-শরীরেও।

প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (ডিএলএস) ডা. এ বি এম খালেদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পোল্ট্রি ফিডে ট্যানারি বর্জ্য দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। নিয়মিত সম্মিলিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। পোল্ট্রি ফিডে ট্যানারির বর্জ্য মেশানোর অপরাধে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।  

প্রাণী সম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত পোল্ট্রি ফিড। এ বাজারে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। পোল্ট্রি ফিডের প্রধান উপাদান ভুট্টা ও সয়াবিন, এর ৭৫ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। বাকি অংশ আর্জেন্টিনা, ভারত ও ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯
এমআইএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।