এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিতে চলেছে সরকার। দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই ও সমন্বিত আন্তঃসীমান্ত বুদ্ধিস্ট ট্যুরিজম সার্কিট ও রুটের উন্নয়নের অংশ হিসেবে এ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনি কাননে (বর্তমান নেপাল) জন্ম নেন সিদ্ধার্থ গৌতম বা গৌতম বুদ্ধ। এরপর দীর্ঘ ৪৫ বছর বুদ্ধ এতদঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে তার ধর্মের বাণী প্রচার করেন। গৌতম বুদ্ধ বাংলাদেশের পাহাড়পুরেও অবস্থান করেছিলেন বলে বিভিন্ন শ্রুতি রয়েছে। ফলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বাংলাদেশ অন্যতম একটি পবিত্র স্থান। ধর্মপ্রাণ পর্যটকদের টানতে প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হলে অন্য পর্যটকরাও পা বাড়াবেন বাংলাদেশ অভিমুখে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সূত্র জানায়, বুদ্ধিস্ট সার্কিটে সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য ২০১৫ সালের ২৭ ও ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আন্তর্জাতিক বুদ্ধিস্ট কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ইউনাইটেড ন্যাশনস ওয়ার্ল্ড টুরিজম (ইউএনডব্লিউটিও) এর সহায়তায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সেই সম্মেলনের আয়োজন করে। দক্ষিণ এশিয়া ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিস্ট স্থাপত্য, স্থাপত্যশৈলী ও নিদর্শনের উন্নয়ন বা বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে ওই সম্মেলন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রায় ৫০০ প্রাচীন বৌদ্ধ পর্যটনকেন্দ্রে প্রত্নসম্পদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার কথা উল্লেখ করা হয়।
সূত্র বলছে, ওই ৫০০টি বৌদ্ধ পর্যটনকেন্দ্রেরই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। প্রথমে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে ২৫০টি বৌদ্ধ পর্যটনকেন্দ্রে উন্নয়ন করা হবে। এর পরে পর্যায়ক্রমে সবগুলোর উন্নয়ন করা হবে।
এ বিষয়ে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সচিব জয়দত্ত বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ৫০০টি বৌদ্ধ পর্যটনকেন্দ্রে উন্নয়ন করে প্রচারণা করতে পারলে আমরা প্রচুর পর্যটক পাবো। বছরে প্রায় ১০ লাখ বৌদ্ধ ধর্মীয় পর্যটক পাবো। শুধু বুদ্ধিস্ট নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও ছুটে আসবেন। প্যাগোডাগুলোতে ডরমেটরি রাখলে আরও ভালো হবে।
ট্যুরিজম বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্প কাজের অংশ হিসেবে কয়েকটি ওয়েবসাইট উন্নয়ন করা হচ্ছে। এছাড়া একটি ব্রুশার তৈরির কাজ চলমান। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পর্যটকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য খুঁজে পাবেন। বৌদ্ধবিহার ও স্থাপত্য নিদর্শনের সার্বিক তথ্য থাকবে ব্রুশারেও।
ওয়েবসাইট-ব্রুশারে থাকবে কুমিল্লার শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, নওগাঁর পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার, দিনাজপুর জেলার জগদ্দল মহাবিহার, মুন্সিগঞ্জ জেলার বজ্রযোগিনীর বিক্রমশীল মহাবিহার, ঢাকা জেলার ধামরাই, চট্টগ্রামের পণ্ডিত বিহার, পটিয়ার চক্রশালা, রামুর রামকোট বিহার, অধুনা আবিষ্কৃত নরসিংদী জেলার উয়ারী-বটেশ্বর ইতিহাস প্রসিদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং বৌদ্ধ শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্রগুলোর তথ্য। থাকবে এসব স্থানে কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কী খাবেন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট তথ্য।
ট্যুরিজম বোর্ড সূত্র জানায়, বুদ্ধিস্ট সার্কিটের সুফল নিতে প্রথমে ভুটানকে টার্গেট করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। বাংলাদেশ ও ভুটানের ট্যুর অপারেটরদের মধ্যে বিজনেস মিটিং হয়েছে। হয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং ফার্ম নিয়োগও।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) বোরহান উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বুদ্ধিস্ট সার্কিট সুবিধা পেতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য সরকার কাজ করছে। বর্তমানে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও ব্রুশারের কাজ চলছে। এসবের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানতে পারবেন বাংলাদেশে কোথায় বৌদ্ধ ধর্মীয় পর্যটন স্থান রয়েছে। এসব স্থানে অবকাঠামোগত উন্নয়নে একটা মাস্টারপ্ল্যান হাতে নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
এমআইএস/এইচএ/