ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিবেশীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক মনোভাব উন্নয়ন সহজ করে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯
প্রতিবেশীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক মনোভাব উন্নয়ন সহজ করে ড. কালাম স্মৃতি পদক গ্রহণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ছবি: পিআইডি

ঢাকা: পারস্পরিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক মনোভাব থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতে উন্নয়ন করা সহজ হয়।

পারস্পরিক আস্থা, প্রত্যয় ও শুভকামনার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক গত এক দশকে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ড. কালাম স্মৃতি পদক গ্রহণকালে একথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে পদক তুলে দেন ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান উপদেষ্টা টি পি শ্রীনিবাসন ও সংস্থাটির চেয়ারপারসন দীনা দাস।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক গড়ে তোলায় অসামান্য অবদান, জনকল্যাণ ও আন্তর্জাতিক শান্তি-সহযোগিতায় বিশেষ অবদান রাখায় ‘ড. কালাম স্মৃতিপদক-২০১৯’ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমস্যা থাকবে, সমস্যা থাকা খুব স্বাভাবিক, কিন্তু প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সবক্ষেত্রে একটা সহযোগিতামূলক মনোভাব থাকলে পরে সে সব দেশে উন্নয়ন করা অনেক সহজ হয়।

তিনি বলেন, সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা, পাশাপাশি যে সব বিষয়গুলো আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি আমাদের সব সময় চিন্তা করতে হবে জনগণকে নিয়ে। জনগণ যাতে সুফল পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পদক্ষেপ নেই। সেজন্য একটা বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক গড়ে তোলায় আমরা সব সময় গুরুত্ব দিয়েছি।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পারস্পরিক আস্থা, প্রত্যয় ও শুভকামনা ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক গত এক দশকে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে।

‘দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন প্রচলিত ও অপ্রচলিত ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশ্ববাসীর কাছে এটাও একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। ’

পদক গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা আমাকে সম্মানিত করেছেন, মানে বাংলাদেশের জনগণকে সম্মানিত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড. এপিজে আবদুল কালামের আদর্শ ও শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রবর্তিত ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স পুরস্কার গ্রহণ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং সম্মানিত বোধ করছি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী একজন বিজ্ঞানী ও ভারতের স্বনামধন্য রাষ্ট্রপতি যাকে আমি সব সময়ই সম্মান এবং শ্রদ্ধার চোখে দেখি। আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

‘এই পুরস্কার আমাকে ও আমার সরকারকে আগামী দিনগুলিতে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমের সংরক্ষণ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে জনগণের বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অর্জনে কাজ করতে উৎসাহ যোগাবে।

ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

অতীতে যারা নিজ নিজ দেশের ও সারা বিশ্বের টেকসই উন্নয়নের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার পেয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানান তিনি।

পুরস্কারটি দেশের জনগণের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং উদ্ভাবন, আবিষ্কার ও যেকোনো বাধা-বিপত্তি জয় করে সাফল্য অর্জনে যুব সমাজকে ভিন্নভাবে চিন্তাশীল করতে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল অপরিসীম। তার কাজের মাধ্যমে ড. কালাম সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠেছিলেন একজন জনগণের রাষ্ট্রপতি। তিনি খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করে বলেন, বস্তুতপক্ষে, বঙ্গবন্ধু ও রাষ্ট্রপতি আবুল কালাম দু’জনেরই চিন্তাভাবনার বৃহৎ মিলন ঘটেছে এক জায়গায়। উভয় নেতাই সাধারণ মানুষের সুপ্ত সম্ভাবনা উন্মোচিত করতে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ড. কালাম পদক প্রদান উপলক্ষে মানপত্র পাঠ করেন ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারপারসন দীনা দাস।

মানপত্রে দীনা দাস বলেন, মর্ডান বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট শেখ হাসিনা যিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে, দ্রুত বাংলাদেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে (শেখ হাসিনা) প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, ভারতরত্ম ড. এপিজে আবদুল কালামের নামে ড. কালাম স্মৃতি আন্তর্জাতিক এক্সিলেন্স পদক দেওয়া হয়েছে।

মানপত্রে তিনি আরও বলেন, ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ড. আবদুল কালাম ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দু’দেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্য, অশিক্ষামুক্ত করে সমৃদ্ধি আনতে কাজ করেছেন।

মানপত্রে বলা হয়, সন্ত্রাস, সংঘাত মুক্ত শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া ড. কালাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উভয়ের ভিশন।

এতে আরও বলা হয়, মানবকল্যাণে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাজের স্বীকৃতি এই পদক, যা প্রয়াত ড. আবদুল কালামের স্বপ্ন ছিল। যিনি বলেছিলেন, যা ঘুমিয়ে দেখা হয় তা স্বপ্ন নয়। বরং যা ঘুমোতে দেয় না তাই স্বপ্ন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল থেকে কেরালার ঐতিহ্যবাহী শাড়ি দেওয়া হয়।

২০১৫ সাল থেকে ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, ভারতরত্ম ড. এপিজে আব্দুল কালামের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এ পদক চালু করা হয়। মালদ্বীপ, ঘানা, মরিশাসসহ কয়েকটি দেশের প্রেসিডেন্ট এ পদক নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর এ পদক গ্রহণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, ভারত থেকে আসা প্রতিনিধিদলসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।