গিয়ারের বিজ্ঞাপন চিত্রে দেখা যায়, একটি মেয়ে বাইকের ওপর বসা থাকা একটি ছেলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ‘আপনার বাইকে উঠতে পারি? ছেলেটি একটু ‘ভাব’ নিয়ে উত্তর দেয়, ‘সরি, অপরিচিত কাউকে বাইকে নিই না। ’ এরপরই একটি গিয়ারের বোতল ছেলেটি শক্ত হাতে ধরে এবং খাওয়া শুরু করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে গিয়ার খাওয়ার পর ছেলেটির শরীরে নতুন মাত্রার এনার্জি যুক্ত হয়েছে। যে এনার্জির কারণে দুজনকে একই সঙ্গে ঘুষি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার চিত্র দেখানো হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বুঝানো হয়েছে এই ড্রিংকসটা মূলত এনার্জির জন্যই তৈরি করা। এটা মূলত এক ধরনের পণ্য, কিন্তু বিজ্ঞাপনের প্রচারে বলা হচ্ছে অন্য কথা। যা জনগণকে বিভ্রান্ত করার মতো বিষয়। এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার মানে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করা। কারণ প্রতিষ্ঠান বিক্রি করছে কার্বোনেটেড বেভারেজ, বিজ্ঞাপনে বুঝাচ্ছে এনার্জি ড্রিংকস। এটা সুস্পষ্ট নীতিমালার লঙ্ঘন। ’
নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এর ৪১ ও ৪২ ধারায় মিথ্যা, অসত্য বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। ৪২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্য উপকরণের গুণ, প্রকৃতি, মান ইত্যাদি সম্পর্কে অসত্য বর্ণনাসংবলিত কোনো বিজ্ঞাপন প্রস্তুত, মুদ্রণ, প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না যার মাধ্যমে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে। একইভাবে মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা, ২০১৭-এর ১৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে লেবেলে বিভ্রান্তিকর, অসত্য বা মিথ্যা নির্ভরতামূলক তথ্য সন্নিবেশ করা যাবে না এবং এ ধরনের তথ্য ব্যবহার করে কোনো বিজ্ঞাপন প্রস্তুত, মুদ্রণ বা প্রচার করা যাবে না।
কিন্তু ইউটিউব বা টিভি চ্যানেলে গিয়ারের যে বিজ্ঞাপন রয়েছে তাতে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এটি একটি এনার্জি ড্রিংকস। অথচ মোড়কে পণ্যটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কার্বোনেটেড বেভারেজ নামে।
মেঘনা গ্রুপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পণ্যের বর্ণনা দেওয়া রয়েছে। সেখানে বেভারেজ ক্যাটাগরিতে গিয়ারকে রাখা হয়েছে। গিয়ারের পরিচিতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি এনার্জির নতুন উৎস (নিউ সোর্স অব লং লাস্টিং এনার্জি)। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানটি ২০০ মিলি ও ৫০০ মিলি এর বোতল বাজারজাত করে আসছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মাহাবুব কবীর বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো মনিটরিং করব। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এনার্জি ড্রিংকস নিষিদ্ধ করেছে। তার আগে অবশ্য প্রকাশ্যেই অনেক কোম্পানি কার্বোনেটেড বেভারেজের লাইসেন্স নিয়ে প্রকাশ্যে এনার্জি ড্রিংকস ঘোষণা দিয়ে তা বাজারজাত করত। কিন্তু নিষিদ্ধ করার পর থেকে অনেকেই ঘোষণা করছে কার্বোনেটেড বেভারেজ, কিন্তু বিজ্ঞাপনে বলছে এনার্জি ড্রিংকস।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
এমএমএস