রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি মাদকাসক্তি নিরাময় ক্লিনিকে চিকিৎসার নামে নির্যাতনের অভিযোগ পেয়ে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় মুক্তি ক্লিনিক নামের ওই প্রতিষ্ঠানকে আট লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
রোববার মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘যত দূর মনে পড়ে, আমরা অনেক অনিয়ম পেয়েছিলাম ওই মুক্তি ক্লিনিকে। ওইগুলোর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও ছিল, যা রোগীদের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা। ’
র্যাব সূত্রে জানা যায়, মানসিক ও মাদকাসক্ত রোগীদের সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালানো এবং মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন খাবার সরবরাহের দায়ে গুলশান-২ এলাকায় অবস্থিত মুক্তি ক্লিনিককে আট লাখ টাকা জরিমানা করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানকালে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় যে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স নেই। সঠিক কারণ ছাড়াই রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অধিকাংশ রোগী কোনো বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিতে চাইলে তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। উপরন্তু অধিক পরিমাণ ঘুমের ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের শারীরিকভাবে দুর্বল করে রাখা হয়।
অভিযানকালে ক্লিনিকটিতে একজন আবাসিক চিকিৎসককে পাওয়া যায়, যিনি নিজেই মাদকাসক্তির কারণে একসময় এখানে ছয় মাস চিকিৎসা নিয়েছেন। এমনকি ক্লিনিকে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনকালেও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হননি। ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত বিশেষজ্ঞদল এমন অভিমত দেয়। এসব মাদকাসক্ত চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের বেধড়ক মারধর করাসহ নানা মাত্রায় শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।
দেশের প্রথম মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র দাবি করে সরকারি-বেসরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নেওয়া মুক্তি ক্লিনিক এখন পুরোপুরি বাণিজ্যিক অপরাধকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই ক্লিনিকের টর্চার সেল ব্যবহার করে জায়গাজমি নিয়ে বা অন্য কোনো শত্রুতাবশত প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। চাহিদামাফিক টাকা ধরিয়ে দিয়ে যেকোনো সুস্থ ব্যক্তিকেও মাদকাসক্ত বানিয়ে অনায়াসে মুক্তি ক্লিনিকের টর্চার সেলে মাসের পর মাস আটকে রাখা যায়।
টঙ্গী সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি হোসেন মোক্তারকে (৭০) তাঁর ছেলেরা এভাবেই মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগী সাজিয়ে মুক্তি ক্লিনিকে আটকে রাখার ব্যবস্থা করেন। ছেলেদের লিখে দেওয়া সম্পত্তি ফেরত চাওয়ায় এবং নিজের অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলেদের নামে লিখে না দেওয়ায় এই নির্মম ঘটনা ঘটানো হয়।
জানা গেছে, হোসেন মোক্তার গত রবিবার সকালে টঙ্গীর আউচপাড়ায় মোক্তারবাড়ি রোডের একটি দোকান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বড় ছেলে রফিকুল ইসলাম ও ছোট ছেলে মাজহারুল ইসলাম জোর করে তাঁকে একটি গাড়িতে তুলে নেন। এর পর থেকে তাঁর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্তানরা তাঁকে মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগী বানিয়ে গুলশানে মুক্তি নামের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে রফিকুল ইসলাম ও মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা মানসিক রোগী। তাই তাঁকে গুলশানের মুক্তি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। ’
আউচপাড়ার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলেক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হোসেন মোক্তার তাঁর মোট সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে বণ্টন করে দেন। এ ছাড়া চার সন্তানকে তিনি পাকা বাড়ি করে দিয়েছেন। কিন্তু ছেলেরা তাঁর দেখভাল না করায় এবং মাদকাসক্ত ও অবাধ্য হওয়ায় তিনি তাঁদের শাসন করেন এবং লিখে দেওয়া সম্পত্তি ফেরত চান। এ নিয়ে মামলাও করেন আদালতে। এতে ছেলে-মেয়েরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাকি সম্পত্তি তাঁদের নামে লিখে দিতে চাপ দেন। অন্যথায় হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ নিয়ে একাধিকবার সালিস হলেও ছেলেরা বাবার কোনো কথা শুনতে নারাজ।
সৌজন্য: কালের কণ্ঠ
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
একে