ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিজেদের অর্থে দীর্ঘ সেতু, এখানে কাজ করছি ভেবে গর্ব হয়

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৯
নিজেদের অর্থে দীর্ঘ সেতু, এখানে কাজ করছি ভেবে গর্ব হয়

পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকা থেকে ফিরে: সরকারি কাজের বেতন-সুবিধা কম, তবু কাজ করছি এখানে। দেশের দীর্ঘতম সেতুতে কাজ করছি বলে গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে।আরও ভালো লাগে- যখন ভাবি নিজেদের অর্থে নির্মাণ হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম এই সেতুটি। একথা ল্যাব টেকনিশিয়ান আতিয়ার রহমানের, যিনি পদ্মাসেতু প্রকল্পে সিমেন্ট-পানি-বালি-পাথরের মিশ্রণ সঠিক পরিমাপে আছে কি-না তা তদারক করেন।

সারাদিন এই মিশ্রণের কাজ তদারক করেন আতিয়ার রহমান। হাতে থাকা মিটারে মেপে দেখেন নিজেদের অর্থে নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর গুণগত মান ঠিকঠাক হচ্ছে কি-না?

শুধু আতিয়ার নন, এমন হাজারো শ্রমিক ও প্রকৌশলী পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতু নিয়ে গর্ব করেন।

দেশের দীর্ঘতম সেতু হচ্ছে পদ্মায়, এত বড় প্রকল্প কাজ করতে গিয়ে স্বভাবতই গর্ব তাদের।

প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন যাওয়ার যে টার্গেট দিয়েছেন, সেই সময়ই সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন আতিয়ার।

তিনি বলেন, এখন সব সেক্টরের কাজ চলছে, শুধু সময়ের অপেক্ষা সেতুর কাজ শেষ হওয়াটার। পদ্মাসেতুর নির্মাণযজ্ঞ নিয়ে কথা বলছেন একজন।  ছবি: ডিএইচ বাদলবিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত হওয়ার কথা থাকলেও কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মাসেতুতে ঋণ প্রদান বাতিল করে সংস্থাটি। শেষতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়চিত্তে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোঘণা দেন। অজস্র বাধা পেরিয়ে সেই সেতুর অনেকটাই এখন দৃশ্যমান। যে স্বপ্ন দেশের মানুষ বুকে লালন করে আসছিলেন, তা বাস্তবে রূপ নিতে দেখে বুকভরা আশা নিয়ে থাকছেন আতিয়ারের মতো মানুষগুলো।

‘এই পদ্মাসেতুতে কাজ করা নিজের কাছে গর্বের। যদিও সরকারি প্রজেক্টে বেতন অনেক কম। তবু এখানে কাজ করছি, কারণটা পদ্মাসেতু’- প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলছিলেন আতিয়ার। একসময় লালন শাহ সেতু (পাবনার সঙ্গে কুষ্টিয়ার সংযোগকারী) নির্মাণেও কাজ করেছেন তিনি।

আতিয়ারের ধারণা, বাংলাদেশের এখন এমন বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা হয়ে গেছে। নিজেদের অর্থে নির্মাণ করায় টাকাটাও দেশে থেকে গেল, এই টাকা দিয়ে এই পদ্মাসেতুর মতো আরও একটা প্রকল্পও করা যেতে পারে।

পদ্মাসেতু নির্মাণ হলে ঢাকার সঙ্গে ফরিদপুর-খুলনাঞ্চলে যাওয়ার পথ একেবারেই কমে যাবে। ফরিদপুরের একাংশ ছাড়াও কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ীর মানুষ এদিক দিয়ে চলাচল করবে। এই সেতু মাওয়া ও জাজিরা পয়েন্টকে এক করে দেবে।

দৃশ্যমান স্বপ্নের পদ্মাসেতু।  ছবি: ডিএইচ বাদলমাওয়া পয়েন্টে পদ্মার পাড়ে এমবিইসি জেটিঘাটে নিরাপত্তার কাজ করেন জালাল উদ্দিন। তার বাড়ি মাওয়া প্রান্তের হলুদিয়া বাজার এলাকায়। গত চার মাস ধরে প্রকল্পে কাজ করছেন পঞ্চাশোর্ধ জালাল।

অভিব্যক্তি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এই এলাকায় ব্রিজ হচ্ছে, এটা আরও ভালো লাগছে। সারাদেশের মানুষের এতে উপকার হবে।

ইতোমধ্যেই পদ্মাসেতুর প্রায় দুই কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। চলছে নদীশাসনের কাজও। নদীশাসনের কাজের ৬৪ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। চীনা কোম্পানি নদীশাসনের কাজ করছে, এতে বাংলাদেশি কর্মীরাও যুক্ত রয়েছেন।

এদের একজন আবু জাহিদ মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, যিনি উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নদীশাসন)। তিনি বলেন, মূল সেতুর সঙ্গে সমানতালে নদীশাসনের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এ সেতু গোটা দেশের মানুষের কাছেই অনেক গর্বের।  

আর পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, টার্গেট ২০২১ সালের জুন মাস। এই সময়ের মধ্যেই খুলে যাবে পদ্মাসেতুর দুয়ার।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৯
এমআইএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।