মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) এক বার্তায় এই শোক প্রকাশ করেন তিনি।
শোকবার্তায় মেয়র প্রয়াত ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মেয়র বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের একজন অন্যতম সৈনিক ছিলেন রওশন আরা বাচ্চু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি নিজের জীবন বাজি রেখে যেসব ছাত্র নেতারা তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের ডাকা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মাতৃভাষার অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে নেমেছিলেন, রওশন আরা বাচ্চু তাদের মধ্যে অন্যতম।
‘সেদিন পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে মিছিল নিয়ে এগোলে তিনি পুলিশের আক্রমণের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন। তিনি একাধারে একজন রাজনীতি সচেতন ও শিক্ষানুরাগী মানুষ ছিলেন। ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চুর অবদান এই জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। ’
মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রওশন আরা বাচ্চু।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় রওশন আরা বাচ্চু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের (ঢাবি) ছাত্রী। ২১ ফেব্রুয়ারি যেসব ছাত্রনেতারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ছিলেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি জনমত সমর্থনের জন্যও ব্যাপক তৎপরতা চালান।
তিনিই সেসময় ইডেন মহিলা কলেজ এবং বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সংগঠিত করে আমতলার সমাবেশস্থলে নিয়ে আসেন। সেখান থেকেই ছাত্রনেতারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন। তারা ব্যারিকেড টপকিয়ে মিছিল নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেন।
কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে ব্যারিকেড টপকানো বেশ কঠিন ছিল। রওশন আরা বাচ্চু তার দলের সবাইকে নিয়ে পুলিশের তৈরি ব্যারিকেড ভেঙ্গে ফেলেন। এরপর পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে দেয়। এতে অনেকেই হতাহত হন। সেসময় রওশন আরা বাচ্চুও আহত হয়েছিলেন।
রওশন আরা বাচ্চু ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সিলেটের কুলাউড়া থানার উছলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এ এম আরেফ আলী ও মায়ের নাম মনিরুন্নেসা খাতুন।
১৯৪৭ সালে পিরোজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৪৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন রওশন আরা। এরপর ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে অনার্স করে ১৯৬৫ সালে বিএড ও ১৯৭৪ সালে ইতিহাসে এমএ করেন।
রওশন আরা বাচ্চু সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও উইম্যান স্টুডেন্টস রেসিডেন্সের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্টের সঙ্গে ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন।
যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও। যার মধ্যে রয়েছে- ঢাকার আনন্দময়ী স্কুল, লিটন অ্যাঞ্জেলস, আজিমপুর গার্লস স্কুল (খন্ডকালীন), নজরুল একাডেমি, কাকলি হাই স্কুল এবং আলেমা একাডেমিতে। সবশেষে ২০০০ সালে বিএড কলেজের অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৯
এসএমএকে/এসএ