বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে ২৮তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালন এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স 'সুবর্ণ ভবন' উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিদেশে দেখেছি প্রতিবন্ধী শিশুদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সে আর পরনির্ভরশীল থাকে না, নিজে চলতে পারে।
উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিবন্ধী সেবা কেন্দ্র চালু করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ৬৪ জেলার ৩৯টি উপজেলায় মোট ৬১টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু হয়েছে। আমরা প্রতিটি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত করবো। সেটা আমি করতে চাচ্ছি।
তিনি বলেন, যারা প্রতিবন্ধিতায় ভুগছে তাদের ট্রেনিং দিতে হবে, চিকিৎসা দিতে হবে- তারা যেন আমাদের মূল স্রোতের সঙ্গে মিলে থাকতে পারে, জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে থাকতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলাম যে কোন কোন জেলা-উপজেলায় আমাদের জমি রয়েছে। বহু জমি হয়তো পতিত অবস্থায় আছে, বহু জমি আছে দখলে। বহু জমি অবহেলিত আছে বা অন্য কোনো কাজে লাগছে সেগুলো আমরা খুঁজে বের করছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা একেবারে জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, খেলাধুলার ব্যবস্থা, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা, এমনকী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা আমাদের প্রতিবন্ধীদের জন্য করবো। আমাদের সে পরিকল্পনা রয়েছে। ’
‘ইতোমধ্যে আমরা অনুরোধ করবো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে যে এই জায়গাগুলো বের করে আপনারা একটা প্রজেক্ট নেন উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত। যাতে আমরা সার্বিক ব্যবস্থা নিতে পারি। ’
উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় প্রতিবন্ধীদের সম্পৃক্ত করতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের উন্নয়ন, আর এই উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তারা যেন কোনো রকম পেছনে পড়ে না থাকে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজটাকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। একটা বৈষম্যহীন সমাজ। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। এই স্বাধীন দেশে সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অটিজম ও প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে মানুষ এখন যথেষ্ট সচেতন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশ ও বিদেশে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের দেশে এ ব্যাপারে কোনো সচেতনতা ছিল না। আজ আর সেই অবস্থা নেই। এখন মানুষ যথেষ্ট সচেতন।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি- মানুষের কাছে এ কথাটাই বোঝাতে চাই যে অটিজম বা প্রতিবন্ধিতা এটা কোনো অসুস্থতা না, কোনো রোগও নয়। একটা মানুষ হয়তো জন্মগ্রহণ করেছে- কী কারণে অটিজম হয় সেটা এখন পর্যন্ত সেভাবে আবিষ্কার হয়নি। গবেষণা চলছে। আবার প্রতিবন্ধিতা অনেক সময় জন্মগত হয়, আবার অনেক সময় দুর্ঘটনা, অসুস্থতা নানা কারণে হয়।
অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধিতা ও অটিজম বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের পরিবেশিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তাদের স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেন।
অনুষ্ঠান থেকে ‘সুবর্ণ ভবন’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ, পুনবার্সন ও আবাসিক সুবিধার লক্ষ্যে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স ‘সুবর্ণ ভবন’ নির্মাণ করা হয়। এ ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চিত্ত-বিনোদনেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি মো. সাইদুল হক প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
এমইউএম/এএ