যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি নিজস্ব ভাষা, লাল-সবুজ পতাকা, ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের ভূ-খণ্ড। বাঙালি সংগ্রামী জাতি।
দেশভাগ থেকে মুক্তিযুদ্ধ। ২৪ বছর। এই সময়টি এ জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। আমাদের স্বাধীনতার বীজ রোপণও হয় এই সময়কালে। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান আমাদের পূর্বপুরুষরা। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী এই দাবি উপেক্ষা করে দাবি না মানার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয় নিষ্পেষণের পথ। যা পরে আন্দোলনে রূপ নেয়। বাঙালি জাতির ইতিহাসে যা ভাষা আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। এ আন্দোলন দমনে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করেন। সেই মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার। তাদের স্মরণেই নির্মিত হয় এই মিনার। ভাষাশহীদদের স্মরণে দেশবাসী প্রতিবছর শহীদ মিনারের এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শ্রদ্ধা-ভালোবাসার ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় মিনারের বেদি।
প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রাক্কালে নবরূপে সাজাতে রঙ করা, ধোয়ামোছা, বাঁশের বেস্টনি, লাইট ও ক্যামেরা বসানো, দেওয়াল লিখন, আল্পনার জায়গা নির্ধারণ, গাছের গোড়া রঙ করার কাজ চলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে। এ বছরও বিশাল এই কর্মযজ্ঞও কমতি হয়নি।
সরেজমিন শহীদ মিনারে গিয়ে এমন চিত্রই চোখে পড়েছিলো।
একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিন অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকেই পুরোদমে শুরু হয় ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নানা আয়োজন। বাঙালির ভাষা আন্দোলন ও অমর একুশে এখন কেবলই নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়, ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও পালিত হয়েছে বিশ্বজুড়ে। একাধারে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ায় দিবসটি পালনেও এসেছে ভিন্নতা। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীর লাখো মানুষ ভিড় জমিয়েছিলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এই তালিকায় বাদ যায়নি বিদেশিরাও। এজন্যই শহীদ মিনারকে রাঙানোর প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এদের একজন শিক্ষার্থী জানান, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। বাঙালি জাতির জন্য এই দিনটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের পূর্বপুরুষদের আত্মোত্যাগের বিনিময়ে আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি। তাদের এই আত্মোত্যাগের নিদর্শনস্বরূপ নির্মিত হয়েছে এই স্মৃতির মিনার। তাই, একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই স্মৃতিস্তম্ভটিকে সাজানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
সর্বোপরি, বাঙালি জাতির ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনটিকে মহিমান্বিত করার লক্ষ্যে অনেকেই নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তাদের সবার চেষ্টার নবরূপে সেজেছিলো আমাদের শহীদ মিনার। সেসঙ্গে সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে একুশের চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক সবার মধ্যে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
এএটি