বুধবার (১ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের সঙ্কট মোকাবিলায় সফল হতে হলে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও কার্যকর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই, প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। এ ঘোষণার বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব এখন সব পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মী-সুবিধাভোগী, প্রশাসন, পুলিশসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে।
অন্যদিকে, জরুরি প্রয়োজনে ত্বরান্বিত করার বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও ক্রয়খাতে জবাবদিহিতা এবং খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে গতিশীলতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় অবস্থান যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি এর কার্যকর বাস্তবায়নের দায়িত্ব তার দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সুবিধাভোগীর ওপর। তাদের প্রতি এখন দেশবাসীর প্রত্যাশা, এ ঘোষণার প্রতি তারা শুধু শ্রদ্ধাশীল থাকবেন তা-ই নয়, বরং এ মহাদুর্যোগের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে দূরে থেকে তারা সব প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি, আত্মসাৎ, অপচয় এবং রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের অপচর্চাকে সক্রিয়ভাবে প্রতিহত করবেন। ’
মাদারীপুরের শিবচর, হবিগঞ্জের বাহুবল ও ভোলায় সরকারি সহায়তার চাল ও ভোজ্য তেল নিয়ে অনিয়মের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের যে দৃষ্টান্ত সংবাদ মাধ্যমে এসেছে তা উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জড়িতরা শাসক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা অন্যভাবে প্রভাবশালী হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা যেভাবে কঠোর অবস্থান নিতে পেরেছেন তাতে আমরা স্বস্তি পেয়েছি। কিন্তু এর ঠিক বিপরীতে অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘দোকান খোলা রাখার’ অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার নাম করে ক্যাশবাক্স থেকে টাকা নেওয়ার সময় হাতে-নাতে ধরা পড়েছেন পুলিশ সদস্য। আমরা সীতাকুণ্ডের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবেই দেখতে চাই এবং আশা করতে চাই শিবচর, ভোলা ও বাহুবলের দৃষ্টান্ত সব প্রশাসনিক ও সেনাসদস্যসহ আইনপ্রয়োগে নিয়োজিতদের জন্য মডেল হবে। কোনো ব্যত্যয় হলে সরকার ও প্রশাসন পরিচয় ও অবস্থান নির্বিশেষে কঠোরভাবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেবেন। ’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন,‘বাংলাদেশে সুশাসনের ঘাটতি এবং বিশেষ করে প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগে নিয়োজিত সংস্থার দুর্নীতি-প্রবণতা সর্বজন বিদিত। অন্যদিকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এ সংস্থাসগুলোর হাতে বর্ধিত দায়িত্ব ও ক্ষমতার পাশাপাশি বর্ধিত সম্পদ অর্পিত হবে এটাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যারা দুর্নীতিপ্রবণ তারা এ দুর্যোগের সময় তারা আরও বেশি অনৈতিকতায় নিমজ্জিত হবেন এ ঝুঁকি বিবেচনায় সরকারের উচিত হবে করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় গৃহীত সব কার্যক্রমের বাস্তাবায়নের মূলধারায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণকে শীর্ষ প্রাধান্য দেওয়া। ’
‘দুর্যোগ মোকাবিলায় ও এর আর্থ-সামাজিক প্রভাব ব্যবস্থাপনায় সরকারের ক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রমও যৌক্তিকভাবে ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে এবং অনেক ক্ষেত্রে তা ত্বরান্বিত করতে হচ্ছে বা হবে। তবে এ জাতীয় সব কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন এ সব কার্যক্রম কোনো মহলের অতিরিক্ত মুনাফা ও অনৈতিকভাবে সম্পদ বিকাশের সুযোগে রূপান্তরিত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে,’ বলেন ড. জামান।
তিনি আরও বলেন, খাদ্যপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পচনশীল সামগ্রীর সরবরাহ-চেইন সচল রাখতে পুলিশ এবং প্রয়োজনে বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর সহায়তায় সীমিত পরিসরে যোগাযোগ ব্যবস্থা সক্রিয় রাখতে হবে। অন্যথায় ভোক্তাদের এ ধরনের পণ্যের সংকটের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে কৃষিনির্ভর জনগণের দুর্ভোগ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২০
ইইউডি/ওএইচ/