জানা গেছে, প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকেই ঈদুল ফিতরের নতুন কাপড় তৈরির ভিড় লেগে যেত দর্জিপাড়ায়। ঈদ যত এগিয়ে আসে দর্জিপাড়ার কারিগরদের ব্যস্ততাও ততই বাড়তে থাকে।
করোনা ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে জেলার দুই সহস্রাধিক দর্জির উপার্জন। সদ্য শপিংমল ও দোকানপাট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খুলে দেওয়ায় দর্জি পাড়ায় কিছুটা কাজ বাড়লেও নেই আগের মত ব্যস্ততা। ফলে দোকান ভাড়া আর ঈদের খরচ নিয়েও চিন্তিত দর্জিরা। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকায় ভাড়ার চাপ ছিল না। কিন্তু দোকান খুলে যাওয়ায় দোকান ভাড়ার চাপও তৈরি হয়েছে। এটা শুধু দর্জি পাড়ায় নয়, সব ব্যবসায়ীরা দোকান ভাড়া নিয়ে চিন্তিত। অল্প ক্রেতার ঈদ মার্কেট খুলে যৎসামান্য আয় করে এখন খরচের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, বড় বড় ব্যবসায়ীরা দোকানে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা পণ্য ঈদ মার্কেটে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করলেও ক্ষুদ্র বা অল্প পুঁজির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সামান্য পণ্য কেনাবেচা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। লকডাউনের পর দোকান খুলে দেওয়ায় একদিকে ক্রেতা কম অন্যদিকে দোকানে পণ্য না থাকায় তেমন বিক্রি নেই। ব্যবসা করছেন বড় বড় পাইকারি প্রতিষ্ঠান। তারা পাইকারি বন্ধ করে খুচরা বিক্রি বাড়িয়েছেন। ফলে করোনার ঝুঁকিতে শপিংমল, দোকান খুলে দিয়েও খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এর ওপর রয়েছে দোকান ভাড়া পরিশোধের চাপ।
লালমনিরহাট শহরের প্রাণ কেন্দ্র মিশন মোড়ের ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক রাজা বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের জন্য রমজানের আগে মোকাম থেকে কাপড় নিয়ে আসা হয়। এ বছর লকডাউন ও পরিবহন বন্ধ থাকায় মোকাম থেকে কাপড় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। যে কাপড় ছিল তাই নিয়ে দোকান খুলেছি। পুরাতন দেখে ক্রেতারা ভিড়ছেন না। করোনা ঝুঁকি নিয়ে দোকান খুললেও আশানুরূপ ব্যবসা হচ্ছে না। এরপরও গত তিন মাসের দোকান ভাড়াও দিতে হচ্ছে ঘর মালিককে। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকলে ভাড়া দিতে হত না। কিন্তু দোকান খুলেছি। তাই ভাড়াও দিতে হবে। দোকান খুলে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দর্জিরা জানান, স্বল্প পরিসরে দোকান খুলে দেওয়ায় যারা ঝুঁকি নিয়ে কেনাকাটা করছেন। তাদের বেশির ভাগই তৈরি পোশাকের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এরপরেও যারা কাপড় তৈরির জন্য দর্জির দোকানে যাচ্ছেন, তাদের সবার চাহিদামত সময় কাপড় ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ফেরত দিতে হচ্ছে। নির্ধারীত সময়ের মধ্যে দোকান বন্ধ করতে গিয়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও সুতাসহ সব সরঞ্জামের দাম দ্বিগুন বেড়ে যাওয়ায় পোশাক তৈরির খরচও বেড়েছে। বর্ধিত খরচে পোশাক তৈরিতেও আগ্রহ নেই ক্রেতাদের। ফলে লকডাউনে মার্কেট খুলেও তেমন সুফল নেই দর্জিদের। তারা সমাগমহীন পরিবেশে দীর্ঘসময় দোকান খুলে রাখার দাবি জানান।
টেইলার মাস্টার সন্তোষ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, আগে রমজান শুরু হলে কাজের ধুম পড়ে যেত। এবার করোনায় সেই ব্যস্ততা নেই। সীমিত পরিসরে মার্কেট খুলে দেওয়ায় কাজ আসলেও তা সময় মত দেওয়া যাচ্ছে না। সুতাসহ পোশাক তৈরির সরঞ্জামের দাম দ্বিগুন বেড়েছে। বর্ধিত দামে পোশাক তৈরিতেও অনীহা অনেকের। নির্ধারিত সময়ে দোকান বন্ধ করায় কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। দর্জির দোকান সমাগমহীন। তাই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দীর্ঘ সময় কাজের অনুমতি চান দর্জিরা। অন্যথায় দোকানে নতুন কাপড় কিনেও তৈরির অভাবে মানুষ ঈদে পরিধানে ব্যর্থ হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২০
আরএ/এমকেআর