ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফেনীতে করোনা আক্রান্ত বাড়লেও তোয়াক্কা নেই স্বাস্থ্যবিধির

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
ফেনীতে করোনা আক্রান্ত বাড়লেও তোয়াক্কা নেই স্বাস্থ্যবিধির

ফেনী: ফেনীতে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। এরপরও মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীন মানুষ। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসন মাইকিংসহ নানা সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না অনেকেই। স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মাস্ক ছাড়াই ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন মানুষ। বাজার, রাস্তাঘাট, বিপণীবিতানসহ কোনো স্থানেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের এ অবহলোর কারণে ফেনীতে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসতে পারে করোনা ভাইরাস।

ফেনী জেলা শহরের ট্রাংক রোড়, এসএসকে সড়ক, মহিপাল, বড় বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাস্ক ছাড়াই বের হয়েছেন অনেকে। কাঁচাবাজার, মাছ বাজারসহ বিপণীবিতানগুলোতে কেউই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।

গাদাগাদি করে কেনাকাটা করছেন। শারীরিক দূরত্ব মানার বালাই দেখা যাচ্ছে না কারো মাঝে। প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনা মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। রাস্তা-ঘাটে তাদের দেখা যাচ্ছে মাস্ক ছাড়াই, মানা হচ্ছে না নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, জেলায় শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ২২৫ জন। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় আক্রান্ত ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ৬ উপজেলার মধ্যে সদর ও দাগনভূঁঞা উপজেলায় এ পরিমাণ উর্ধ্বমূখী। জেলায় ২ হাজার ৬৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলে ১ হাজার ৬৪৬টি প্রতিবেদন এসেছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। একজন নারী ও অপর চারজনই পুরুষ। জেলা স্বাস্থ্য তথ্য বিশ্লেষণ করে সংক্রমণের এ চিত্র পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, গত ১৬ এপ্রিল এক যুবক আক্রান্তের মধ্য দিয়ে জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তার বাড়ি ছাগলনাইয়ার উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নে। এরপর একেএকে ছড়িয়ে পড়ে সবক’টি উপজেলায়। সদর ও দাগনভূঁঞা উপজেলায় রোগী অর্ধশতক ছাড়িয়েছে। পরশুরামে সংক্রমণ এখনও তুলনামূলক কম।

..ঈদকে কেন্দ্র করে ঢিলেঢালাভাব এবং লোকজনের চলাচল বাড়ায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। যার প্রবণতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই কম-বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। শুক্রবার নতুন করে ৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের সিংহভাগই আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়েছেন। বাকিরা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ফিরেছেন। যার ফলে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।

এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা নিয়ে নানা অজুহাতের পাশাপাশি অনেকেই রেগে যাচ্ছেন। আবার কেউ বিব্রত হচ্ছেন। ফেনী শহরের বড় বাজার এলাকায় কবির আহম্মদ নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে মাস্ক পরা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরলে গরম লাগে তাই খুলে রেখেছি’।

সবজি বাজারে আসা হাবিব নামের আরেকজন বললেন ‘ বাজারে এসে সাড়ে ৩ ফুট দূরত্ব মানা সম্ভব? কোনাভাবেই বাজারে এসব মানা সম্ভব হবে না।

সেনাবাহিনী, পুলিশ প্রশাসন নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছেন মানুষ যেন ঘর থেকে বের হলে মাস্ক পরেন। বজায় রাখেন শারীরিক দুরত্ব। তবে বর্তমান করোনা সঙ্কটে মানুষকে বাধ্য করার চেয়ে স্বেচ্ছায় আইন মানাকে জরুরি মনে করছেন তারা।

ফেনী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আতোয়ার রহমান বলেন, প্রত্যেকের উচিত নিজেদের এবং অন্যদের নিরাপত্তার জন্য মাস্ক পরিধান করে ঘর থেকে বের হওয়া। কোনোভাবেই যেন মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের না হন। এ ছাড়া রাস্তা-ঘাট, বিপণীবিতান, বাজার ও গণপরিবহনেও মানতে হবে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব। এটির ব্যত্যয় হলে আইনানুগ ব্যবস্থার কথাও জানালেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, মুখে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। বলা হচ্ছে, মানুষ যেন ঘর থেকে বের হলেই মাস্ক পরেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। এর ব্যতিক্রম হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তিও দেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলা উদ্দিন বলেন, শুধু প্রশাসন আর সরকার আইন মানার জন্য বললে হবে না। জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে। জনগণের উচিৎ নিজেদের রক্ষায় স্বপ্রণোদিত হয়ে আইন মানা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২০
এসএইচডি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।