ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনাকালে অভিবাসীদের প্রতি মানবিক হওয়ার আহ্বান বাংলাদেশের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৩ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২০
করোনাকালে অভিবাসীদের প্রতি মানবিক হওয়ার আহ্বান বাংলাদেশের

ঢাকা: করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি প্রাক্কালে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় 'বৈশ্বিক সংহতি ও সহযোগিতা' ও 'সুদৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা' প্রদর্শনের প্রতি আহ্বান জানালেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

'কোভিড-১৯ এর প্রাক্কালে অভিবাসন: অভিবাসীদের স্বাস্থ্য ও রেমিটেন্স' শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে এ আহ্বানের কথা জানান তিনি।  

শনিবার (৬ জুন) জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

অভিবাসন সংক্রান্ত সমমনা দেশসমূহ এ ইভেন্টটির আয়োজন করে। ব্যাপকভাবে কোভিড-১৯ এর প্রভাবজনিত ভয়াবহতার শিকার হওয়ার পাশাপাশি অভিবাসীরা বিশ্বের অনেক জায়গাতেই তাদের অধিকার, জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবা এমনকি চাকরির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, অভিবাসীরা হচ্ছেন তাদের গ্রহণকারী দেশগুলোর উন্নয়নে অবদান রাখা প্রথম সারির কর্মী, এমনকি এ করোনাকালেও এ কথা সত্য; অতএব ওইসব দেশগুলো কোভিড-১৯ মোকাবিলা-উত্তরণে যে পরিকল্পনা ও প্যাকেজসমূহ গ্রহণ করেছে তাতে অবশ্যই অভিবাসীদেরও অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে।

অনেক দেশ থেকে অভিবাসীদের জোরপূর্বক নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফাতিমা বলেন, প্রত্যাবর্তনকারীদের ব্যবস্থাপনা অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ; এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রচেষ্টাসমূহে অবশ্যই জাতিসংঘসহ অন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদার ও অংশীজনদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো ও বেনিন যৌথভাবে ‘অভিবাসন সংক্রান্ত সমমনা দেশসমূহের গ্রুপের সহ-আহ্বায়ক। আয়ারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও প্রবাসী মন্ত্রী সিয়ারান ক্যানন টিডিসহ অভিবাসী প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী দেশসমূহের উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্রদূত উচ্চ পর্যায়ের এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।  

এছাড়া এসডিজি অর্থায়ন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ড. মাহমুদ মোহাইয়েলদিন, আইএফএডি, ডব্লিউএইচও ও অন্য জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা সভাটিতে অংশ নেন।

সভাটিতে এ বিষয়ক ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। বক্তারা উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়নে অভিবাসন ও রেমিটেন্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করে এর ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে মর্মে মতামত দেন।

নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০ শশতাংশেরও বেশি হ্রাস পাওয়া বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণের কথা তুলে ধরে স্থায়ী প্রতিনিধি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, এর পরিণতি হতে পারে খুবই ভয়াবহ যা উন্নয়নশীল বিশ্বের রেমিট্যান্স-নির্ভরশীল পরিবারসমূহকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা জাতিসংঘ মহাসচিবের 'পিপল অন দ্য মুভ' শীর্ষক নীতি-বিবৃতিকে স্বাগত জানান যাতে অভিবাসীদের ওপর কোভিড-১৯ এর সূদুর-প্রসারী প্রভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বৈশ্বিক এ মহামারি চলাকালীন অভিবাসীদের শ্রমবাজারে প্রবেশ, সামাজিক সুরক্ষা এবং প্রাথমিক পরিষেবাগুলোর সুযোগ দেওয়া ও এ সংক্রান্ত বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু দেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রশংসা করেন তিনি। করোনা সৃষ্ট মন্দা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ সচল রাখার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের ‘কল টু অ্যাকশন-রেমিট্যান্সসেস ইন ক্রাইসিস’ শীর্ষক যৌথ বিবৃতিকে স্বাগত জানান স্থায়ী প্রতিনিধি।

অর্থনীতি ও সমাজে অভিবাসী শ্রমিকদের অবদানের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই পুনরায় অভিবাসী শ্রমিকদের উপযোগী পরিস্থিতি তৈরিতে কাজ করতে হবে, এর অন্যথা ঘটলে তা কেবল অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচারকেই উৎসাহিত করবে মর্মে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অভিবাসনকে উন্নয়নের একটি কার্যকর প্রপঞ্চ হিসেবে গড়ে তুলতে অবশ্যই প্রয়োজনীয় নীতিগত পদক্ষেপের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে মর্মে অংশগ্রহণকারীরা একমত প্রকাশ করেন। অভিবাসন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিজনিত ঘাটতি পূরণে ‘অভিবাসনের বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট’ বাস্তবায়নের আহ্বানও জানান বক্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২০ 
টিআর/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।