ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জীবিকার তাগিদে রাঙামাটিতে শারীরিক দূরত্ব মানছেন না শ্রমিকরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২০
জীবিকার তাগিদে রাঙামাটিতে শারীরিক দূরত্ব মানছেন না শ্রমিকরা

রাঙামাটি: প্রতি মুহূর্তেই বিশ্বে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। দেশের অন্য স্থানের ন্যায় পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতেও থাবা বসিয়েছে করোনা। এ ভাইরাসে জেলায় মারা গেছেন দু’জন, আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৬ জন।

যতই দিন যাচ্ছে ততই এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব বাড়লেও মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতা বাড়েনি।

বিশেষ করে শ্রমিজীবী মানুষেরা শারীকিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। এইসব শ্রমজীবী মানুষ কেউ কেউ মুখে মাস্ক পরিধান করলেও শারীরিক দূরত্ব মানছেন না। যে কারণে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা।

শুক্রবার (১৯ জুন) সকালে সরেজমিনে জেলা শহরের পুরাতন বাসস্টেশন এলাকার ইজারা ঘাটে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদে অবস্থান করা পণ্যবাহী নৌকা থেকে শ্রমিকরা বিভিন্ন মৌসুমী ফলসহ অন্যান্য পণ্য গাড়িতে লোড করছেন। গাদাগাদি করে নৌকা থেকে এ পণ্যগুলো খালাস করছেন তারা। তাদের মধ্যে কারো করোনার ভয়। কেউ মানছে না শারীরিক দূরত্ব। বেশির ভাগ শ্রমিকের মুখে নেই মাস্ক। তাদের কাছে পেটের দায়টা করোনায় চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রায় দু’মাসের লকডাউনে রাঙামাটিতে কর্মহীন হয়ে পড়েন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। এসময় তারা ঘরে বসে অলস সময় কাটান। লকডাউন খোলার পরপরই এইসব নিম্নআয়ের শ্রমিকরা করোনায় ভয়কে উপেক্ষা করে পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে, তারা কাজে নেমে শারীরিক দূরত্ব মানছেন না।

পুরাতন বাসস্টেশন এলাকার ইজারঘাটের শ্রমিক নুরুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, যতক্ষণ শ্বাস-প্রশ্বাস আছে ততক্ষণ পরিশ্রম করে যাবো। করোনার ভয়ে ঘরে বসে থাকলে কেউ খাবার দিয়ে যাবে না। তাই আমার কাছে করোনার ভয়ের চেয়ে ক্ষুধার ভয় বেশি। কাজ না করলে ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাবো।
ইজারঘাটে অবস্থানরত শ্রমিকরা, ছবি: বাংলানিউজএকই ঘাটের শ্রমিক নুরুল আলম বলেন, করোনার কারণে আমরা দুই মাস ঘরবন্দি ছিলাম। বউ-বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটিয়েছি। এখন বেশ ভালো আছি। শ্রম দিচ্ছি, টাকা আয় করছি। করোনার ভয়ে আর ঘরে থাকতে পারবো না।

মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী উদয় বড়ুয়া বলেন, করোনার কারণে অনেকদিন ব্যবসা করতে পারিনি। এখন স্বল্প পরিসরে চালু রাখার চেষ্টা করছি। ব্যবসা না করলে খাবো কী?

এ ফল ব্যবসায়ী বলেন, চেষ্টা করছি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার। কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন। এ স্থানে সত্যিই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। কেননা, নৌকা থেকে পণ্যগুলো তোলার সময় শ্রমিকদের কয়েকবার হাত বদল করে গাড়িতে লোড করতে হচ্ছে। যে কারণে একজন আরেকজনের সংস্পর্শে চলে আসছেন। এছাড়া পুরো এলাকায় শ্রমিকদের এতো আনাগোনা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কোনোভাবে সম্ভব নয়।

তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতনতার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) উত্তম কুমার দাশ।

এনডিসি বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের জীবন বাঁচাতে, করোনার ভয়াবহতা রুখতে এবং ভাইরাসটি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে শুরু থেকে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। আমাদের কাছে মানুষের জীবন বাঁচানো আগে। যে কারণে আমরা সকাল এবং বিকেলে রাঙামাটি শহরে দু’টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। কেউ সরকারি নিয়ম না মানলে তাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে।

আমরা হাটবাজার, ইজারঘাটসহ সব এলাকায় অভিযান অব্যাহত থাকবে। কেউ শারীরিক দূরত্ব না মানলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান উত্তম কুমার দাশ।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, জুন ২০২০ 
এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।