ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ নেতৃত্ব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৯ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২০
করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার একক বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা।

করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এই সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন বাস্তবমুখি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে অগ্রসর হচ্ছে। আর এই সব পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের একক কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

 

করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) তাণ্ডব চলছে সারা বিশ্ব জুড়ে। এই তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশ। গত ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংকট মোকাবিলায় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন বিচক্ষণ ও দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংকট মোকাবিলায় তিনি কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রণোদনার পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকার উপরে। করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুর্যোগে সারাদেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মানবিক সহায়তা হিসেবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে সরকার ।

সরকারের হিসাব অনুযায়ী ২৮ জুন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় কোটির বেশি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন এই সংকট যতদিন থাকবে ততদিন তার সরকারের এ পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।

দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২৭ জুন পর্যন্ত সারাদেশে  চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৭ মেট্রিক টন এবং বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৪ মেট্রিক টন । এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ১ কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ৯০৪  এবং উপকারভোগী লোকসংখ্যা ৭ কোটি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫ জন।

শিশুখাদ্য সহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ের জন্য নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২৩ কোটি  টাকা। এর মধ্যে সাধারণ ত্রাণ হিসেবে নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯৫ কোটি ৮৩ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা এবং বিতরণ করা হয়েছে ৮৮ কোটি ৫৭ লাখ ৩৮ হাজার ১৩৩ টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ৯৬ লাখ ৫৯ হাজার ১৭৩ এবং উপকারভোগী লোক সংখ্যা ৪ কোটি  ২৮ লাখ ২২ হাজার ৪১১ জন ।

শিশু খাদ্য সহায়ক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ২৫ কোটি ২১ লাখ ১৯ হাজার ২৪১ টাকা। এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ৮ লাখ ১৫ হাজার ২৯১ এবং উপকারভোগী লোকসংখ্যা ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৩৩ জন।  

বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় বাড়ানো হয়েছে। এই ১০ টাকায় চাল পেতে নতুন ৫০ লাখ রেশন কার্ডসহ মোট ১ কোটি রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ১ কোটি পরিবারের ৫ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এই প্যাকেজে পোশাক শ্রমিকদের শতভাগ বেতন নিশ্চিত করতে ৫ হাজার কোটি টাকা, কৃষি ও কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা, বাজেটে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি, সহজ শর্তে, জামানত ছাড়াই নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও প্রান্তিক/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ কর্মসূচি, কওমি মাদ্রাসাগুলোতে ৮ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সম্মুখ সারির যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ পুরষ্কার ও প্রণোদনায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই কাজে নিয়োজিত থেকে ডাক্তার নার্স, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যসহ সরকারির কর্মকর্তা ও কর্মচারি মারা গেলে এক্ষেত্রে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা।

এদিকে করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনকল্যাণের কথা বিবেচনা করে জাতির পিতার কন্যা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি দীর্ঘদিনের আকাঙ্খিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা স্থগিত করতে। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। ২৬ মার্চ থেকে অফিস-আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে মানুষের জীবনের পাশাপাশি জীবিকার ও দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে তিনি সময়োচিত সিদ্ধান্ত নেন এবং ৬৬ দিন পর সাধারণ ছুটি তুলে দিয়ে সীমিত পরিসরে সকল কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেন।

সংকট মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গত ৩১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৬৪টি জেলার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি একযোগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভাগওয়ারি প্রতিটি জেলার সঙ্গে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে ভিডিও কনফারেন্স চালিয়ে যান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি প্রান্তিক পর্যায়ের খোঁজ-খবর নেন এবং প্রয়োজনীয় দিকদির্দেশনা দেন। ৬৪ জেলায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ত্রাণ বিতরণসহ সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারের ৬৪ জন সিনিয়র সচিব/সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ভিডিও কনফারেন্স এবং জাতীয় উদ্দেশ্যে দেওয়া একাধিক ভাষণে সংকট কাটিয়ে উঠতে সকলকে সার্বক্ষণিক সাহস যুগিয়েছেন।

করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই পদক্ষেপগুলো দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রসংশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী ফোর্বসের এক নিবন্ধে করোনা ভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় দ্রুততার সঙ্গে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়েছে। কানাডিয়ান লেখক অভিভাহ ভিটেনবার্গ-কক্স তার এ নিবন্ধে লেখেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৬ কোটি ১০ লাখের মত মানুষের দেশ বাংলাদেশ সমস্যা-সংকটের সঙ্গে অপরিচিত নয়। তিনি এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুত সাড়া দিয়েছেন, যাকে ‘প্রশংসনীয়’ বলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম। ’

আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক নিউজপেপার দ্য ইকোনমিস্ট করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতির নিরাপত্তা নিয়ে অতি সম্প্রতি যে গবেষণার তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যায় ভারত-চীন থেকেও নিরাপদ বাংলাদেশের অর্থনীতি।

বাংলপাদেশ সময়: ০৫৩৯ ঘন্টা, জুন ২৯, ২০২০
এসকে/ইউবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।