মঙ্গলবার (৩০ জুন) বিকেল ৩টায় ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার এবং সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শেষ ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রে পানি হ্রাস পেয়েছে মাত্র ৮ সেন্টিমিটার।
এই সামান্য মাত্রায় নদ-নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় দুর্ভোগ কমেনি বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, সদর, নাগেশ্বরী উপজেলাসহ ৯ উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি।
বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে সরেজমিনে উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার হাতিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি সামান্য হ্রাস পেলেও তলিয়ে আছে অনেক ঘর-বাড়ি। গত ৫/৬ দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন মানুষজন। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া চারণভূমিগুলোতে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিতরা। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট তলিয়ে ও ধসে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। চরাঞ্চলগুলোতে অনেক ঘর-বাড়িতে পানি ওঠায় বন্যার্তরা পাশ্ববর্তী বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।
বন্যা কবলিত হাতিয়া ইউনিয়নের নীলকন্ঠ গ্রামের শামছুল আলম (৫৫) বাংলানিউজকে বলেন, বানের পানি ঘর-বাড়িতে ওঠায় বাঁধে আশ্রয় নিচি। কোনো কাজকামও নাই। আগে তো বাইরে যায়া কাজ কাম করছি। এখন তো করোনার কারণে সরকারের কড়াকড়ি থাকায় যাওয়া বন্ধ। নিজের এলাকায় তো কোনো কাজ নাই।
হাতিয়া ইউনিয়নের বাবুর চরের গোলজার হোসেন (৬৫) বলেন, ৫ দিন ধইরা ঘরে পানি উঠছে। বউ-বাচ্চারে পাশের অনন্তপুর বাঁধের রাস্তায় রাইখা আইছি। বাড়ি-ঘর তো আর খালি রাইখা যাইবার পারি না, তাই নৌকায় কইরা পাহারা দিতাছি।
সাংবাদিক দেখে আফসোসের সঙ্গে হাতিয়া ইউনিয়নের চর গাবুরজানের ফাতেমা বেগম (৪৫) বলেন, খালি ফটোক তুলি নিয়্যা যান, তাতে আমগোর কী হয়। প্যাট তো আর ভরে না। তোমরা ছবি তোলেন, আর প্যাট ভরে চেয়ারম্যান- মেম্বরদের। চতুর্দিকে পানি। কোনো দিকে যাওয়ার উপায়ও নাই।
বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ সহায়তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের গুঁজিমারী, চর দাগারকুটি, চর গাবুরজান, নয়াডারা, বাবুর চর, শ্যামপুর, নীলকণ্ঠসহ ২৫টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় ৫ হাজার মানুষ বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। পানি নেমে না যাওয়ায় তারা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। এতো এতো বন্যা কবলিতদের মধ্যে মাত্র ৬০০ জনকে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ১০ কেজি করে চাল ও সাবান দেওয়া হয়েছে। এসব মানুষের হাতে কোনো কাজ না থাকায় জরুরি খাদ্যসহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। বন্যার্তদের সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারি ত্রাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো। রেজাউল করিম জানান, জেলার বন্যা কবলিত মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানদের মাঝে এগুলোর বিতরণ চলছে।
এদিকে বন্যায় ফসলি ও কৃষি জমির ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, আমন বীজতলা, আউশ, শাক সবজি, পাটসহ অন্যান্য ফসল মিলিয়ে জেলায় ৫ হাজার ৬শ’ ৫৮ হেক্টর জমি বন্যার পানিতে তলিয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২০
এফইএস/এইচজে