মঙ্গলবার (৩০ জুন) দুপুরে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ১ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ২ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র এখনও বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
অন্যদিকে করতোয়ার পানি ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে আর তিস্তার পানি ২০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
এদিকে, জেলার ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে পড়েছে উপজেলার জিগাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এছাড়া পশ্চিম জিগাবাড়ী এলাকার ৪২টি পরিবার নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ বাংলানিউজকে জানান, ফুলছড়িতে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। চরম হুমকির মুখে পড়েছে এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, জিগাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এরেন্ডাবাড়ী পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, দুই জামে মসজিদ, জিগাবাড়ী বাজার নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা, জিগাবাড়ী ঈদগাহ মাঠ, একটি বিএস কোর্য়াটার, ৩টি মোবাইল টাওয়ার এবং এরেন্ডাবাড়ী ও জিগাবাড়ী বাজার। ইতোমধ্যে জিগাবাড়ী বাজারের জামে মসজিদটি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে। পশ্চিম জিগাবাড়ী এলাকার ৪২টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়েছে।
অন্যদিকে, গাইবান্ধা সদরের নতুন ব্রিজ থেকে ডেভিড কোম্পানি পাড়ার শহররক্ষা বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার আগে তড়িঘড়ি করে বালু দিয়ে সংস্কার শুরু করে। বন্যার পানির তোড়ে বালু সরে গিয়ে এখন বাঁধের ৪টি পয়েন্টে ফুটো দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ছে। সেইসঙ্গে বাঁধের গোড়ার মাটি ধসে যাচ্ছে। ফলে শহর রক্ষা বাঁধটি চরম হুমকির মুখে আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, জিগাবাড়ীর স্থাপনাগুলো রক্ষার্থে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ড্যাম্পিংয়ের কাজ চলমান আছে। এছাড়া বাঁধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ কে এম ইদ্রিশ আলী বাংলানিউজকে বলেন, জেলার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ৪ হাজার ৫৩৬ পরিবারের ১৭ হাজার ৮৪৪ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সরকারি ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ৭৭ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বাকিরা বাঁধ ও সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ২৫৫ ঘরবাড়ী।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বন্যার পানিতে জেলায় ৩ হাজার ১০৬ হেক্টর জমির পাট, ১৯৬ হেক্টর আউস ধান ও ১২৮ হেক্টর শাক-সবজি, ৪৩ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা, ৪৪ হেক্টর তিল ও ২০ হেক্টর জমির চিনা বাদাম নিমজ্জিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২০
আরএ