রংপুর মহাসড়ক থেকে বুড়িমারি ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত-নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মহাসড়কটি।
ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ করতে ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি চার লেনে রূপ দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্ভব নয়। প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে। ফলে উত্তরবঙ্গবাসীর স্বপ্ন পূরণে আরো তিন বছর বাড়তি সময় লাগবে। বর্ষা মৌসুম, কোভিড-১৯ ও জমি অধিগ্রহণ বিলম্বিত হওয়ায় কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের আওতায় ফ্লাইওভারসহ নতুন নতুন কাজ যোগ হবে। ফলে ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে পারে। তবে কত টাকা বাড়বে তার হিসাব এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি।
প্রকল্পের পরিচালক ওয়ালিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কোভিড-১৯ ও বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের কাজের গতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বেঁধে দেওয়া সময়ে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে। খাত বাড়বে। ফলে ব্যয়ও বাড়বে। তবে এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। সামনে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করে ঠিক করা হবে। তবে ব্যয় খুব বেশি বাড়বে না।
প্রকল্পটি টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা গেছে, এখনো সড়ক ও সেতুসমূহের সার্ভে ও ডিজাইন কাজ চূড়ান্ত হয়নি। মাঠ পর্যায়ের পূর্তকাজের তদারকি কাজ চলমান। ৭টি নির্মাণ প্যাকেজের আওতায় সড়ক ও সেতুসমূহের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে সবেমাত্র। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৬১ মিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি সেতু, ৪১১ মিটারের একটা রেলওয়ে ওভারপাস ও ১১টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এলেঙ্গায় ১ হাজার ৫৩৮ মিটার, কড্ডার মোড়ে ৩৯৬ মিটার ও গোবিন্দগঞ্জে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু ইপিজেড ও গোবিন্দগঞ্জ পলাশবাড়ী এলাকায় নতুন করে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ যোগ হয়েছে।
‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা’ দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙা গোল চত্বরটির চারপাশে চারটি আন্ডারপাস, একটি ফ্লাইওভার ও চারটি করে পৃথক লেন নির্মাণ করা হয়েছে, যেন কোনো গাড়িকে সিগনালে না পড়তে হয়। প্রতিটি লাইনের গাড়ি তার লেন ধরে চললে কোনো ধরনের যানজটে না আটকেই চলে যেতে পারবে গন্তব্যে। ভাঙার মতো হাটিকুমরুলে দৃষ্টিনন্দন ইন্টারসেকশন নির্মাণ করা হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ও বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোরে (বিসিআইএম) নতুন করে বাংলাদেশের ৮টি মহাসড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে। এই সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ কিলোমিটার। ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি এর একটি অংশ। এই সড়কের মাধ্যমে রংপুর-সৈয়দপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ করা যাবে। ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে এই করিডোরটি অন্যতম অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ করতেও রুটটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এ রুটটি ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সরসারি দ্রুত সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করবে। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় এ রুটে প্রতিদিন ১২ থেকে ২৯ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়াবে। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় রুটের উভয়পাশে স্লো মুভিং ভেহিক্যাল ট্রাফিক (এসএমভিটি) লেন নির্মাণ করা হবে। ১৯০ কিলোমিটার রুটের যেখানে যানজট বেশি হবে এমনকি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে ২ হাজার ৬৩৫ মিটার।
শিল্পায়ন, নগরায়ন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা হবে। ফোর লেনের মাধ্যমে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) উন্নয়ন সহযোগীরা আরও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে।
প্রকল্প এলাকায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ অনেক ট্যুরিজম জোনো পযর্টকদের আনাগোনা বাড়বে। কারণ সড়কপথে যাতায়াতের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে আরো অপেক্ষা করতে হবে উত্তরবঙ্গবাসীদের।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২০
এমআইএস/এজে