ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

আ. লীগ নেতা আব্দুস সামাদ এখন চা বিক্রেতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১২ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২০
আ. লীগ নেতা আব্দুস সামাদ এখন চা বিক্রেতা

নওগাঁ: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চারিদিকে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা চলছিল, ঠিক তখন জীবন বাজি রেখে মাত্র ১১ বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছিলেন আব্দুস সামাদ।

১৯৬০ সালে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গৌরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অর্থবিত্তের অভাব ছিল না বাবা গশির উদ্দীন মণ্ডলের।

সেই সুবাদে এক রকম রাজার হালেই দিন চলছিল আব্দুস সামাদের। বড় হয়ে বাবার দেখানো পথে যোগ দেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। নিজের যোগ্যতা বলে ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব পান সাপাহার উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বর্তমানে তিনি দলের কোনো পদে নেই। সময়ের বিবর্তনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ে হারিয়েছেন সহায় সম্বলও। ১৯৭৯ সালে এসএসসি পাসের পর আর পড়া হয়নি। তাই আজ চা বিক্রি করেই চলে তার সংসার। আ. লীগ নেতা আব্দুস সামাদ

আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯৬ সালে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সাপাহার উপজেলা সদরের জয়পুর মাস্টার পাড়ায় বসবাস শুরু করি। এখানে আসার পর প্রথমে বিভিন্ন কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত চা বিক্রিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের সবার আলাদা সংসার। কখনো চা-পান বিক্রি করে, আবার কখনো দিনমজুরি দিয়ে কোনো মতে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে তারা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে সামনে থেকে দলের জন্য কাজ করেছি। আর আজ আমাকে ফেরি করে চা বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়, আক্ষেপ করেন তিনি।

তিনি বলেন, কোনো দিন দলের কোনো সহযোগিতা পাইনি। প্রতিদিন চা বিক্রি করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়, তা দিয়েই বুড়ো-বুড়ির সংসার চলে। বয়সের ভারে এখন আর তেমন চা বিক্রিও করতে পারি না। এবারের আমের মৌসুমে কিছুদিন আম বাগানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছি। এমন অভাবেও মেলেনি সরকারি বা দলীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা।

এরপরও রাজনীতির নেশা কাটেনি। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চা বিক্রি শেষে ঘণ্টা দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে কাটান আব্দুস সামাদ।

নিজের অভাব ঘোচাতে দলের ঊর্ধ্বতন নেতা ও সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি। বলেছেন, একটু সহযোগিতা পেলে স্ত্রীকে নিয়ে শেষ জীবনটা কিছুটা সচ্ছলভাবে কাটাতে পারব।

সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কল্যাণ চোধুরী জানান, আব্দুস সামাদকে সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নজর থাকবে। পাশাপাশি তাকে কীভাবে অর্থিকভাবে সচ্ছল করা যায়, সেদিকটাও দেখা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।