প্রাণিসম্পদ অফিস ও খামারিরা জানান, গরুর শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে জ্বর আসে। এরপর চামড়ায় গুঁটি হয়ে পানি জমে এবং পরে গলায় ও পায়ে পানি জমে আসে।
আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি রুহুল আমিন জানান, তার ছয়টি ফ্রিজিয়ান গরুর সবগুলো এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ছয় হাজার টাকার ওষুধ নিয়েও কোনো কাজ হয়নি। দিনদিন অবনতি হচ্ছে গরুগুলোর। প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দেখা পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
একই অভিযোগ ওই গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি মামুন মিয়ার। তিনি বলেন, নয়টি গরুর মধ্যে দুটি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ১০/১৫ দিন ধরে পল্লী চিকিৎসকদের দেওয়া চিকিৎসাপত্র নিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। গরু খাওয়া বন্ধ করায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। উঠে দাঁড়াতেও পারছে না আক্রান্ত গরু। বেশি টাকা দিয়েও এ রোগের ওষুধ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। আসন্ন ঈদের বাজার নিয়েও শঙ্কিত তিনি।
জেলার ৫টি উপজেলায় এ পর্যন্ত এ রোগে প্রায় অর্ধশত গরুর মৃত্যু এবং পাঁচ হাজারের বেশি গরু আক্রান্ত হয়েছে বলে দাবি করেন খামারিরা। তবে খামারিদের এ দাবি মানতে নারাজ জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দাবি প্রায় দুই হাজার গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করা হচ্ছে ভ্যাকসিন ক্যাম্প।
গরুকে ভ্যাকিসিন দিতে সম্প্রতি সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নে ক্যাম্প করা হয়েছে। সারা জেলায় চলছে এ রোগের ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের ওষুধ বিক্রেতারা জানান, লাম্পি স্কিন রোগের জন্য গরু ছাগলের জ্বর ও ব্যথানাশক ওষুধের সরবরাহ কমে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কিছুটা বেশি দামেও কেউ কেউ সংগ্রহ করছেন। এটি ভাইরাসজনিত রোগ এবং এর প্রতিষেধক ওষুধ বাজারে নেই। তবে এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু আক্রান্ত গরু ছাগল দুর্বল হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা।
আদিতমারী উপজেলার প্রাণকেন্দ্র সালমা সুপার মার্কেটের গরুর ওষুধ বিক্রেতা বকুল চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, এ রোগে আক্রান্ত দেড় থেকে দুই শত গরুর চিকিৎসা দিয়েছি। দুই একটা মারা গেলেও এ রোগে মৃত্যুর হার অনেক কম। এটা ভাইরাসজনিত রোগ। ৭০ শতাংশ গরু আক্রান্ত হচ্ছে এ রোগে। শুধুমাত্র জ্বর ও ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় চাহিদা মত ওষুধ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।
লালমনিরহাট প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, লাম্পি স্কিন রোগ ভাইরাসজনিত চর্ম রোগ। এ রোগে আক্রান্ত পশুর সুস্থ হয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। জেলাব্যাপী এ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিটি এলাকায় ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সরবরাহ সংকট দেখিয়ে যাতে ওষুধের দাম বেশি নিতে না পারে সেজন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলায় প্রায় দুই হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এ রোগে আক্রান্ত গরুর মৃত্যুর হার অনেক কম। সাময়িক দুর্বল হলেও রোগ সেরে উঠলে তারা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
মশা-মাছি থেকে এ রোগ বেশি ছড়ায়। তাই গরু ছাগলকে সাধ্যমত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং জ্বর ও ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে যাবে। তাই দুশ্চিন্তা না করে খামারে পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব দিতে খামারিদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২০
আরএ