বাঁধ নির্মাণ যতটা হয়েছে, তাতেই এবার ভাঙনমুক্ত রয়েছে ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ও রাজাপুর ইউনিয়ন। আর বাঁধটির কাজ পুরোপুরি শেষ হলে মেঘনার ভাঙন থেকে রক্ষা পাবেন বলে আশা করছেন ইলিশা-রাজাপুরবাসী।
তাই এখন তারা নিশ্চিন্তে-নির্বিঘ্নে বসবাস করছেন সেখানে। বাঁধ হতে দেখে অনেকেই আবার নতুন করে বসতি গড়ে তুলছেন এ দুই এলাকায়। গৃহহারা অনেক পরিবার আবারও ফিরে এসেছেন নিজ নিজ এলাকায়। স্থায়ীভাবে ভাঙন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভোলায় মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ ও নতুন বাঁধ নির্মাণ কাজ এখন অনেকেটাই শেষের দিকে, যে কারণে নদী এখন আর তাড়া করে বেড়ায় না উপকূলের মানুষদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল কয়েক বছর আগের কথা, যে সময় মেঘনার ভয়ঙ্কর ছোবলে বসতি হারাতে হয়েছিল হাজার হাজার মানুষকে। বিলীন হয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা-মসজিদ ও লঞ্চ-ফেরিঘাটসহ অসংখ্য স্থাপনা।
নদীর তাড়া খেয়ে ভোলা সদরের পূর্ব ইলিশা ও রাজাপুরের মানুষ যখন ভিটে-মাটি হারা হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন ঠিক তখনি ভাঙন রোধকল্পে ৩১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়।
ভাঙনকবলিত দু’টি ইউনিয়নকে রক্ষায় ২০১৬-১৭ সালের দিকে শুরু হয় ভাঙন রোধে প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ সিসিব্লক ও নতুন বাঁধ নির্মাণের কাজ। যা এখন অনেকটাই শেষের দিকে।
নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কারণে নতুন বসতি গড়ার পাশাপাশি নিজ এলাকায় ফিরে আসতে শুরু করেছেন গৃহহারা মানুষগুলো। নিশ্চিন্তে বসবাস করছেন নদীর তীরবর্তী মানুষজন।
নদীর তীরে বসবাসকারী রাবেয়া, বিল্লাল হোসেন, ফারিয়া বাংলানিউজকে জানান, কয়েকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তারা। এখন বাঁধ নির্মাণের ফলে ভাঙন বন্ধ হওয়ায় নিশ্চিন্তে নতুন করে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেছেন তারা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু তাহের, সুমন ও আলেমসহ অনেকে বাংলানিউজকে জানান, এক সময় যে ভাঙন ছিল তাতে বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এখন বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় স্থায়ীভাবে ভাঙন বন্ধ হয়েছে। ফলে মানুষজন নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। কেউ জমি কিনছেন কেউবা নতুন করে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করে দিয়েছেন।
পূর্ব ইলিশা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইলিশা আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৫ সালে মেঘনার যে ভয়াবহ রূপ ছিল, তখন ইলিশাবাসী ভাঙনের কারণে বিভিন্ন স্থানে চলে গিয়েছিলেন। এখন বাঁধ নির্মাণের ফলে ভাঙনমুক্ত হওয়ায় আবার নতুন করে ইলিশার মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার পাকা ঘরও নির্মাণ করছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমাদের সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমদকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তার প্রচেষ্টায় এ বাঁধের কাজ হয়েছে। এখন এখানকার লক্ষাধিক মানুষ নিরাপদে নির্বিঘ্নে বসবাস করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ইলিশা ইউনিয়নের মেঘনার তীরবর্তী এলাকাবাসীসহ কালুপুর, সোনাডগি, মুরাদ সলিউল্ল্যা ও রাজাপুরসহ বহু এলাকা ঝুঁকিমুক্ত আছে। এখন আর কোথাও নেই কোনো নদী ভাঙন। গত ৪ বছরে একটু জমিও ভাঙেনি। আর এই ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে ভাঙন রোধকে কেন্দ্র করে ইলিশা বাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকা ও রাজাপুর পয়েন্টেও এমন সড়কের চারপাশে দেখা মেলে এখন নতুন নতুন ঘর আর উন্নয়নের নানা কার্যক্রম।
পাউবো ভোলার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নান খান বাংলানিউজকে বলেন, বেরিবাঁধ নিমাণ কিছু দিনের মধ্যেই ভাঙন রোধের পুরো কাজ শেষ হবে।
এদিকে উপকূলের মানুষকে আর যাতে ভাঙনের মুখে পড়তে না হয়, সে জন্য সঠিকভাবে কাজ সমাপ্তের দাবি এলাকাবাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২০
এসআরএস