ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অফবিট

দুই দেশ, দুই ভাই!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
দুই দেশ, দুই ভাই! বন্ধুত্বের নজির, ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী চলমান উত্তেজনা ও সংঘাতের মাঝেই প্রতিবেশী দুই দেশ হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের বন্ধুত্ব প্রশংসা কুড়িয়েছে। তারা ২৩ মার্চকে ‘হাঙ্গেরীয়-পোলিশ বন্ধুত্ব দিবস’ হিসেবে পালন করে, যে দিনটিতে এমনকি দুই দেশের সীমান্তও খুলে যায় পরস্পরের জন্য।  

দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও উদ্‌যাপন করা হয়।

২০০৭ সালে উভয় দেশের সংসদ সর্বসম্মতভাবে দিবসটি পালনের ঘোষণা দেয়।

এটি পারস্পরিক আস্থার ক্ষেত্রে বিশ্বের একমাত্র প্রশংসনীয় উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন হাঙ্গেরির পাননোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ প্রফেসর গাবর লাগজি।

‘হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের মধ্যে বন্ধুত্ব আলাদা দু’টি ওক গাছের মতো, যাদের শিকড় নিলীন, কিন্তু মাটি থেকে একসঙ্গে উত্থিত। আমাদের এ গভীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রায় ১ হাজার বছরের। পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির দুঃসময়ে একে অপরকে সাহায্যেরও দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে’- ব্যাখ্যা লাগজির।

চতুর্দশ শতাব্দীতে হাঙ্গেরীয় রাজা লুই গ্রেট পোলিশ সিংহাসনও মামার উত্তরাধিকারসূত্রে পান। পোলিশ রাজা ক্যাসিমির উত্তরাধিকারী ছাড়াই মারা গেলে তার ভাগ্নে লুই গ্রেট তার জীবনের বিভিন্ন সময়ে আলাদাভাবে উভয় দেশ শাসন করেন। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে জাডউইগা পোল্যান্ডের প্রথম রানি হন, যিনিও দুই দেশেরই একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।

১৫৭৬ সালেও অন্য এক হাঙ্গেরীয় পোলিশ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন, যখন পোল্যান্ডের মানুষ তাদের শাসক হিসেবে ট্রান্সেলভেনিয়ান রাজকুমার ইস্তভান বাথোরিকে নির্বাচিত করেন।

মধ্যযুগের এসব সম্রাট ও জাতীয় বীররা দু’দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক প্রায়ই বিয়ের মাধ্যমে আরও জোরদার করেন। কিন্তু সব রয়্যালটি দু'দেশের মধ্যেই ভাগ করা হয়েছিল।

১৮৩০ সালে রাশিয়ান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে পোলিশ গণজাগরণ এবং ১৮৪৮ সালে অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে হাঙ্গেরীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম- দু’টি ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব ও প্রেরণা দেন  পোলিশ জেনারেল বেম। তিনি এখন উভয় দেশের জাতীয় বীর হিসেবে বিবেচিত। দুই দেশের মানুষই তাকে সম্মান করেন ‘বেম দাদু’ বলে।

যেন দুই দেশ, দুই ভাই, ছবি: সংগৃহীতলাগজি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত রচিত হয় ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির হাতে তাদের দেশের (পোল্যান্ড) পতনের পর। এক লাখেরও বেশি পোলিশ শরণার্থীকে আমরা আশ্রয় দিই। হাঙ্গেরির সঙ্গে জার্মানির মৈত্রী থাকলেও পোলিশ উদ্বাস্তুদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয় আমাদের দেশ’।

‘এরপর হাঙ্গেরিও জার্মানির দখলে চলে যায়। তার আগ পর্যন্ত পোলিশ উদ্বাস্তুরা এখানে নিরাপদে ছিলেন। সকল সাধারণ হাঙ্গেরীয়দের কাছে অভিজাতদের চেয়ে পোলিশদের জন্য বেশি সহানুভূতি ছিল’।

বুদাপেস্টে ১৯৫৬ সালে বিদ্রোহীদের সঙ্গে হাঙ্গেরীয়দের রক্তাক্ত দ্বন্দ্ব বেধে যায়।   পোল্যান্ডের মানুষ দ্রুত এলিস্টার হাঙ্গেরিয়ানদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। যুদ্ধোপকরণ সরবরাহ ছাড়াও হাজার হাজার পোলিশ নাগরিক আহতদের জন্য রক্ত দান করেন। অবশেষে হাঙ্গেরীয় বিদ্রোহীদের বিপর্যয়কর পরাজয় ঘটে, যার নেতৃত্বে ছিলেন পোলিশরাও।

এ ঘটনার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। ৬০তম বার্ষিকীর স্মৃতিরক্ষায় ২০১৬ সালকে ‘হাঙ্গেরীয়-পোলিশ সংহতি বছর’ হিসেবে ঘোষণা  করে হাঙ্গেরীয় সংসদ।

এখন পোলিশ-হাঙ্গেরীয় বন্ধুত্ব দিবস প্রতি এক বছর পর পর পোজনান (পোল্যান্ড) গিওর (হাঙ্গেরি) এর বোন শহরগুলোতে প্রধান উৎসবের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয়। দুই দেশের প্রধান রাজনীতিবিদদের একসঙ্গে জড়ো করারও এটি একটি উপলক্ষ। উৎসবের থিয়েটার, চলচ্চিত্র এবং শিল্প প্রদর্শনীর সবই দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধুত্বকে চারপাশে আরও কেন্দ্রীভূত করে।

পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির সব মানুষই বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব চিরকালের জন্য’।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭
এএসআর/টিআই

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad