বাংলানিউজ: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ।
মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান: অলাইকুম আস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ।
বাংলানিউজ: পবিত্র মাহে রমজানের মাহাত্ম্য আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। বছর ঘুরে আবারও আল্লাহ তাআলার অফুরান রহমত নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে মাহে রমজান। এখন পবিত্র রমজান মাস চলছে। আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহ করে তার বান্দাদের রামজানুল মোবারক দান করেছেন। রামজানুল মোবারকে রোজা ফরজ করেছেন।
রোজা মুসলমানদের জন্য তাকওয়া অর্জন করার বড় উপলক্ষ। আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন বলেন, ‘তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনটা করা হয়েছিল পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো, মুত্তাকিন হতে পারো। ’ রামজানুল মোবারক শেষ হয় ইফতারের মাধ্যমে। ইফতারের অনেক ফজিলত রয়েছে। প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘তারা ইফতার করবে, অহেতুক দেরি করবে না। ’ (তার মানে এ নয় যে, সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে ইফতার করা। )
ইফতারের অনেক ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করেন ইফতারের সময়। সেজন্য বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব দোয়া শিখিয়েছেন, সেসব দোয়া পড়া উচিত। ইফতার করা সুন্নত। অন্যকে ইফতার করানোর অনেক বড় ফজিলত রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করালো, সে একটি রোজার সওয়াব পাবে এবং রোজাদারের সওয়াবের কোনো কমতি হবে না। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের কী আছে যে একজনকে পরিতৃপ্ত করে ইফতার করাবো! রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পরিতৃপ্ত করে ইফতার করানো জরুরি নয়। তুমি যদি এক ঢোক পানিও পান করাতে পারো, তাহলে তুমি ইফতার করানোর পূর্ণ সওয়াব পাবে। এ জন্য রোজাদারদের ইফতার করানো উচিত। কিন্তু বর্তমানে লোক দেখানোর জন্য ইফতার করানো হয়। এ থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। আমাদের এমন ইফতারের আয়োজন করা উচিত, যেখানে সত্যিকারের রোজাদাররাই অংশ নেন।
বাংলানিউজ: ইফতারের রহমত নিয়ে কিছু বলুন।
মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান: ইফতার অনেক বরকতময়। এ সময় আল্লাহ তার বান্দার দোয়া কবুল করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই ইফতারের সময় দোয়া করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি দোয়া বলেছেন- যখন বান্দা ইফতার করে তখন এই দোয়া করবে, ‘আমার পিপাসা দূর হচ্ছে, আর আমার দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাল্লাহ। ’
বান্দা একমাত্র আল্লাহর ভয়ে রোজা পালন করে। তার একটি বড় প্রমাণ হচ্ছে, ইফতার আমাদের সামনে থাকে, হাতে শক্তি, পেটে ক্ষুধা ও মুখে রুচি আছে, তারপরও আমরা ইফতার গ্রহণ করি না। কারণ আল্লাহ যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সে সীমায় আমরা পৌঁছতে পারিনি অর্থাৎ ইফতারের সময় হয়নি। আল্লাহর ভয়ে ও মোহব্বতের কারণে আমরা যে রোজা পালন করছি তা প্রমাণিত হয়। রোজাদার সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার করেন। আল্লাহ তা কবুল করেন এবং কল্যাণ দান করেন। এই রোজা ও ইফতারের মাধ্যমে সে যে তাকওয়া অর্জন করেন, সে তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন।
বাংলানিউজ: রমজান তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাস। কি করতে হবে আমাদের?
মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান: পবিত্র মাহে রমজানে তাকওয়া অর্জন করার জন্য আমরা রোজা রাখার চেষ্টা করি। আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রাখলো অথচ মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখলো না, তার রোজার কোনো দাম নেই। ’ তার রোজা কবুল হবে না। সেজন্য রোজা রাখা অবস্থায় আমরা সকল পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখবো।
স্বাভাবিক রোজা হলো কামাচার ও পানাহার থেকে নিজেকে বিরত রাখা। তেমনিভাবে সত্যিকারের রোজা হলো- গুনাহ মুক্ত ও অপরাধ মুক্ত থাকা। সকল খারাপ কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। আমার হাতের রোজা হবে, চোখের রোজা হবে, মুখের রোজা হবে, কানের রোজা হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সত্যিকারের রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলানিউজ: বাংলানিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান: পবিত্র রমজান মাসে বাংলানিউজের অগণিত পাঠকদের জন্য কোরআন ও হাদিসের বাণী প্রচারে এমন উদ্যোগ নেওয়ায় কর্তৃপক্ষকেও অনেক ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
এসএস/এমএমইউ