তাফসির: মানবকর্মের জবাবদিহি ও হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে আলোচ্য আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানুষের কাজকর্মের যাবতীয় তথ্য নির্দিষ্ট গ্রন্থে লেখা হয়।
আরবি ‘ত্বইর’ বা ‘ত্বাইর’ মানে পাখি বা উড়ন্ত বস্তু। জাহেলি যুগে আরবের লোকেরা কোনো কাজ শুরু করার আগে শুভ-অশুভ নির্ণয়ের জন্য পাখি উড়াত। পাখি যখন উড়ে ডান দিকে যেত, তারা ওই কাজকে শুভ বা কল্যাণকর (তাফাউল) মনে করত। আর পাখি বাঁদিকে গেলে তারা ওই কাজকে অশুভ বা অকল্যাণকর (তাশাউম) মনে করত। কাজেই শাব্দিক অর্থের বিবেচনায় এ আয়াতের এ অর্থই সংগত : ‘আমি প্রত্যেক মানুষের ভাগ্যনিরূপণকারী পাখি তার গ্রীবালগ্নে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি। ’ কিন্তু এ অর্থ বোধগম্য নয়।
তবে শাব্দিক অর্থ থেকে এটা বোঝা যায় যে, এখানে তাকদির বা ভাগ্যলিপির কথা বলা হয়েছে। মানুষ দুনিয়ায় যা-ই করুক না কেন, সে অবশ্যই তার তাকদির অনুসারেই করবে। কিন্তু মানুষ যেহেতু জানে না তার তাকদিরে কী লেখা আছে, তাই তার উচিত ভালো কাজ করা। কেননা হাদিসের ভাষ্য মতে, যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে কাজ সহজ করে দেওয়া হয়। কাজেই কে সৌভাগ্যবান, আর কে দুর্ভাগ্যবান, তা নির্ধারিত হবে তার কর্মের মাধ্যমে। যে নেক কাজ করে, সে জান্নাতের পথে আছে। আর যে মন্দ কাজ করে, সে জাহান্নামের পথে আছে।
প্রত্যেক মানুষের সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ও ভালো-মন্দের কর্মধারা নিজ সত্তার মধ্যেই রয়েছে। নিজের গুণাবলি, চরিত্র, কর্ম, যোগ্যতা ও আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সে নিজেই নিজেকে সৌভাগ্যের অধিকারী করে, আবার দুর্ভাগ্যেরও অধিকারী করে। নির্বোধ লোকেরা নিজেদের ভাগ্যরেখা বাইরে খুঁজে বেড়ায়। তারা সব সময় বাইরের কার্যকারণকেই নিজেদের দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী করে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, তাদের ভালো-মন্দের দস্তাবেজ নিজেদের গলায়ই ঝোলানো থাকে। নিজেদের কার্যক্রমের প্রতি তাকালে তারা পরিষ্কার দেখতে পাবে যে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছে। বাইর থেকে কোনো জিনিস তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।
৪র্থ পর্বের তাফসির পড়ুন: মানুষের যাবতীয় কর্ম আমলনামায় লেখা হয়
আলোচ্য আয়াতের শাব্দিক অনুবাদের বাইরে একটি প্রায়োগিক ব্যাখ্যা আছে। সেটি হলো, মানুষের কাজ বা তার আমলনামা। ইবনে আব্বাস (রা.)-সহ সব যুগের বেশির ভাগ তাফসিরবিদ এ অর্থ গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ মানুষ যে জায়গায় যে অবস্থায় থাকে, তার আমলনামা তার সঙ্গে থাকে। কিয়ামতের দিন এ আমলনামা প্রত্যেকের হাতে হাতে দিয়ে দেওয়া হবে, যাতে নিজে পড়ে নিজেই নিজের ফয়সালা করে নিতে পারে যে, সে পুরস্কারের যোগ্য, না আজাবের উপযুক্ত। ভাগ্যলিপি ও আমলনামার মধ্যে পার্থক্য হলো, আল্লাহর জ্ঞান অনুযায়ী ব্যক্তির ভবিষ্যৎ লিপিবদ্ধ রাখার নাম ভাগ্যলিপি। আর সেটা ব্যক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হওয়ার পর লিপিবদ্ধ করার নাম কর্মলিপি বা আমলনামা।
গ্রন্থনা: মাওলানা আহমদ রাইদ
রমজানবিষয়ক যেকোনো লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৯
এমএমইউ