তাফসির: মানুষ তার কর্ম অনুযায়ী প্রতিফল ভোগ করে। আলোচ্য আয়াত থেকে কর্ম অনুযায়ী মানুষের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা করা হয়েছে।
এ আয়াতে সেসব লোকের কথা বলা হয়েছে, যারা পরকাল মানে না। তাদের সব চিন্তাভাবনা বৈষয়িক। মানুষ সম্পদের প্রতি তীব্র আসক্ত। পারলে তারা গোটা দুনিয়াকে আস্ত গিলে খেয়ে ফেলত। কিন্তু মহান আল্লাহ মানুষের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সম্পদ দান করেন না। তিনি যাকে ইচ্ছা, যতটুকু ইচ্ছা দান করেন। যারা এই সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে, তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে বিশেষ প্রতিদান রয়েছে। আর যারা এই সম্পদের সঠিক ব্যবহার করে না, মহান আল্লাহ তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করে রেখেছেন।
অবিশ্বাসীরা দুনিয়ার জীবনকে পরকালীন জীবনের ওপর প্রাধান্য দেয়, তারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে রাখতে চায় আর ধর্মীয় বিধি-বিধানে ছিদ্র তালাশ করতে থাকে। তারা নিজেদের মহাজ্ঞানী ও উন্নত চিন্তার অধিকারী মনে করে। প্রকৃতপক্ষে তারা ঘোর বিভ্রান্তিতে আছে। অবিশ্বাসীরা দুনিয়ার জীবনের প্রতি প্রচণ্ড মোহের কারণে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান মেনে নিতে পারে না। তাদের কাছে পার্থিব সুখ ও সচ্ছলতাই মুখ্য। ফলে তাদের কাছে ধর্মীয় অনুশাসন খুব কঠিন মনে হয়। ধর্মীয় অনুশাসনকে তারা তাদের ভোগ-বিলাসিতার জন্য অন্তরায় মনে করে। ধর্মীয় অনুশাসন লাগামহীন ভোগ-বিলাসিতাকে প্রশ্রয় দেয় না। কাজেই ভোগবাদীরা যে ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধাচরণ করবে—এটাই স্বাভাবিক।
ইসলামে ইহকাল ও পরকালের সমন্বয় স্থাপন করা হয়েছে। জাহেলি যুগের পাদ্রিরা মানুষের ভক্তি পুঁজি করে নিজেরা অর্থ উপার্জন করত। তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর সন্ন্যাসবাদ—এটা তো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রবর্তন করেছিল। আমি তাদের এই বিধান দিইনি, অথচ এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি। ’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৭)
ঈমানদার বিশ্বাস করে, পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী। পরকালের অনন্ত অসীম জীবনে এই জীবনের হিসাব হবে। সেখানে ভালো-মন্দের প্রতিদান দেওয়া হবে। তাই ঈমানদার সম্পদ অর্জনে আল্লাহর বিধি-নিষেধ মেনে চলে, সম্পদ ব্যয়েও সে আল্লাহর হুকুমের অনুসরণ করে। ঈমানদার দুনিয়াকে প্রয়োজনমতো ধারণ করে; কিন্তু দুনিয়া অর্জন কখনোই তার জীবনের লক্ষ্য হয় না। এর বিপরীতে ঈমানহীন লোকেরা দুনিয়া নিয়ে মত্ত থাকে। সব কিছুর ওপর দুনিয়াবি স্বার্থ প্রাধান্য দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকো। অথচ আখিরাতই সর্বোত্তম ও স্থায়ী। এটা তো আছে আগের গ্রন্থে—ইবরাহিম ও মুসার গ্রন্থে। ’ (সুরা : আলা, আয়াত ১৬-১৯)
গ্রন্থনা: মাওলানা আহমদ রাইদ
রমজানবিষয়ক যেকোনো লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘন্টা, মে ১৯, ২০১৯
এমএমইউ