ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সাক্ষাৎকার

আধুনিক পৌরসভা গড়ার ঘোষণা মেয়র সোহেলের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৮ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
আধুনিক পৌরসভা গড়ার ঘোষণা মেয়র সোহেলের

নোয়াখালী: নোয়াখালী পৌরসভা। এটিকে আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল।

এজন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।       

 

বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) দুপুরে ফ্ল্যাট রোডের নিজ কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাতকারে বাংলানিউজকে এ কথা জানান মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে চলতি বছরের ২৫ মে পৌরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। বাংলানিউজের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে এ পৌরসভা নিয়ে তার নানা পরিকল্পনা।

বাংলানিউজ: নোয়াখালীকে আধুনিক শহরে রূপান্তর করতে আপনি প্রথমে কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন বা এ বিষয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল: অর্থনীতি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি থেকে সবক্ষেত্রেই সমৃদ্ধ এ জেলা। এজন্য ঐতিহ্যের সমন্বয়ে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হবে নোয়াখালী পৌরসভাকে। আমার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের শপথ গ্রহণের পর কাউন্সিলরদের নিয়ে এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। এরপর সাধারণ নাগরিকদের মতামতকেও গুরুত্ব দিয়ে কর্ম পরিকল্পনা সাজানো হবে।

বাংলানিউজ: যানজট নিরসনে কি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : আমাদের শহরের অন্যতম প্রধান সংকটের নাম যানজট। সড়কে অব্যবস্থাপনা, চালকদের সচেতনতার অভাব, যত্রতত্র পার্কিং, সিগন্যাল না মানা যানজটের প্রধান কারণ। পৌরসভায় যানজট কমাতে মাইজদী বাজার থেকে নোয়াখালী কলেজ রোড় হয়ে দত্তেরহাট পর্যন্ত এবং মাইজদী বাজার থেকে নতুন জেলাখানা রোড হয়ে সিনেমা হল পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার এবং আধুনিক করা হবে। যানজট নিরসনে গাড়ির চাপর কমাতে পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কালিতারা, সোনাপুর থেকে মাইজদী বাজার পর্যন্ত গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

শহরজুড়ে নিরাপদ ও পরিকল্পিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড/সিএনজিস্ট্যান্ড চালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সরিয়ে নেওয়া হবে। পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, সোনাপুর বাসস্ট্যান্ডকে যুগোপযোগী ও আধুনিক টার্মিনাল হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

বাংলানিউজ: উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখতে দুর্নীতি দূর করতে আপনার ভূমিকা কেমন হবে?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে অতিদ্রুত নোয়াখালী পৌরসভাকে দুর্নীতি ও দখল মুক্ত করা। পাশাপাশি অগ্রজ পৌর চেয়ারম্যানদের উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় জনগণকে তাদের চাহিদার আলোকে সেবা নিশ্চিত করবো। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের মতামতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাংলানিউজ: নোয়াখালী শহরটি মাইজদী নামেই অধিক পরিচিত, মাইজদী  নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি ?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : জনবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব, আলোকিত, উন্নত নাগরিক জীবন গড়ে তোলার জন্য মাইজদীকে রাস্তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে নিরিবিলি শহরের রূপ ধরে রাখা হবে। মাইজদী শহরের আধুনিকতা এক সময় দেশ ছাড়িয়ে বর্হিবিশ্বেও আলো ছড়াবে এ স্বপ্ন আমাকে মোহিত করছে।  

বাংলানিউজ: নাগরিকের মানবিক উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কি?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : পৌরসভার সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা ও বয়স্ক নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বিনোদন চর্চায় নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি পরিচালনা পরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে নাগরিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক লাইব্রেরী, সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চাকেন্দ্র তৈরিতে প্রণোদনা দেওয়া হবে।

“শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক” এর  নামে পৌরসভায় একটি অনুদান তহবিল প্রতিষ্ঠা করা হবে। যার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, এতিমখানা, কমিউনিটির নানা উদ্যোগ, মেধাবী ছাত্রছাত্রী, গুণীজনদের সম্মাননা অনুদান/প্রণোদনা দেয়া হবে। নাগরিকদের শিল্প-সংস্কৃতি-রাজনৈতিক অধিকার চর্চায় একটি আধুনিক পৌর অডিটোরিয়াম তৈরি করা হবে।
 
বাংলানিউজ: সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, টানা বৃষ্টিতে রূপ নেয় বন্যা পরিস্থিতি, চরম ভোগান্তিতে থাকেন নাগরিকরা, এটা থেকে পরিত্রাণে আপনার কি পদক্ষেপ থাকবে ?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : চলতি বর্ষা মৌসুমে এলাকাভিত্তিক জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্থানীয় এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সাপেক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে নিয়মিত ও বিশেষভাবে বর্ষা মৌসুমের (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) পূর্বেই ড্রেনগুলো পরিস্কার করা হবে। ডেন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির আধুনিক বাহন আনা হবে। ড্রেনগুলো সচল রাখতে সচেতনতা ও স্থানীয় উদ্যোগ সৃষ্টির প্রয়াস নেয়া হবে।

বাংলানিউজ: স্বাস্থ্যসম্মত পৌরসভা গঠনে আপনার কি কি পরিকল্পনা রয়েছে?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : উন্নত ও সুন্দর জীবনের জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত পৌরসভা। মশার উৎপাত নাগরিকদের অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যার একটি। তাই মশক নিধন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে। ফরমালিন মুক্ত ও নিরাপদ বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বাজারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হবে। আবরান হেলথ কেয়ার বা নগর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বল্প-নিম্ন আয়ের নাগরিকদের সুলভে চিকিৎসা দেয়া হবে। নগর স্বাস্থ্যসেবাকে আরো প্রসারিত করা হবে।

বাংলানিউজ: পৌর ভবনে নগর পিতা ও নাগরিকদের সেতুবন্ধন কেমন হবে?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : প্রথমেই বলে রাখতে চাই, আমি পৌর পিতা বা নগর পিতা নয়, নাগরিকদের বন্ধু হতে চাই। পৌরপিতা শব্দটির মধ্যেই এক ধরনের নিঃসঙ্গ, কর্তৃত্ববাদী শাসকের ইমেজ ফুটে ওঠে। আধুনিক পৌরসভা বিনির্মাণে আমি নাগরিকদের কাছ থেকে জানতে চাই, শুনতে চাই এবং শিখতে চাই। আমাদের সেতু হবে আন্তরিকতার বন্ধনে।

বাংলানিউজ: বর্তমান সরকার ডিজিটালে গুরুত্ব দিচ্ছে, আপনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্যতম একটি দিক ডিজিটাল, ডিজিটাল পৌরসভা গঠনে কি পরিকল্পনা আপনার?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : পৌরসভায় প্রাথমিকভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিনামূল্যে ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। নোয়াখালী পৌরসভার ওয়ব পেজকে আধুনিকীকরণ করা হবে এবং ই-তথ্য সেবা চালু করা হবে। ডিজিটাল নগর বুলেটিন বোর্ড করা হবে। যেখানে প্রতিনিয়ত ব্রেকিং নিউজ, শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও, পৌরসভা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেখানো হবে।

বাংলানিউজ : পৌরসভা স্থানীয় সরকার হিসেবে সুশাসনে নাগরিকদের অংশগ্রহণমূলক বিষয়ে আপনার ভূমিকা কি হবে?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : জনগণের অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব ও মতামত ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান সত্যিকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা। নোয়াখালী পৌরসভা জনগণের প্রতিষ্ঠান। যার দায়িত্বই হচ্ছে জনগণকে সেবা দেয়া। ফলে দক্ষ ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে জনগণের ব্যাপক অংশমূলক পৌরসভা গড়ে তুলতে চাই।

বাংলানিউজ : কি কারণে মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন?

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই। কারণ এককভাবে এক-দুইজনকে সহযোগিতা করা যায়। কিন্তু একটি গোষ্ঠী বা একটি বৃহত্তর জনপদের সেবায় কাজ করতে হলে নেতৃত্ব প্রয়োজন। তৃণমূলে কাজ করে সে ভালোবাসা আমি সব সময় পেয়ে এসেছি। এই শহরের সন্তান হিসেবে নোয়াখালী পৌরবাসীর সুখে-দুঃখে সর্বদা পাশে থেকেছি। নাগরিকদের ভালোবাসা ও ভোটে আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি।

বাংলানিউজ : আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শহিদ উল্যাহ খান সোহেল : বাংলানিউজকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। ডিজিটালের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অনলাইন। সবার আগে তথ্য সমৃদ্ধ সর্বশেষ সংবাদ পরিবেশন করে নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ আজ সবার শীর্ষে। আরো সাফল্যে ও অর্জনের মাধ্যমে এই ধারাবাহিকতা অটুট থাকবে। আশা করবো বাংলানিউজ তাদের যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্ম তৎপরতা বজায় রেখে পৌঁছে যাবে সফলতার এভারেস্ট শীর্ষে।    

রাজনীতি ও সামাজিক সম্পৃক্ততায় শহিদ উল্যাহ খান সোহেল :
বর্তমানে নোয়াখালী শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ৯০ দশকে গণতন্ত্রে আন্দোলনে নোয়াখালীতে আলোচিত ছাত্র নেতাদের মধ্যে প্রথম সারির একজন শহিদ উল্যাহ খান সোহেল। রাজনীতি করতে গিয়ে বহুবার নির্যাতিত হয়েছেন এবং কারাবরণ করছেন।

নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ রোডের ঐতিহ্যবাহী খান বাড়ির সন্তান। বাবা মহুরম আজমল খান একজন সৎ ও সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। শহিদ উল্যাহ খান সোহেল ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ১৯৮৯ সালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস ছিলেন। ১৯৯০ সালে একই কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সাল থেকে টানা কয়েক দফা শহর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৮ সালে নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার মধ্যে দিয়ে জেলা নেতা হিসেবে আর্বিভাব ঘটে তার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে নোয়াখালী শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে তৃণমূলে মেয়র পদে দলীয় নেতাদের সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

তিনি নোয়াখালী রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের সদস্য, জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, জেলা কারা পরিদর্শক, নোয়াখালী পাবলিক কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী। এছাড়াও তিনি জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৬ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।