ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয় পার্টি

নব্বইয়ের আগে-পরে সবাইকে স্বৈরাচার বলা হয়েছে: জিএম কাদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯
নব্বইয়ের আগে-পরে সবাইকে স্বৈরাচার বলা হয়েছে: জিএম কাদের বক্তব্য রাখছেন জিএম কাদের। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, ’৯০ সালের আগে ও পরে যারা রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেছে তাদের সবাইকেই স্বৈরাচার নামে অভিহিত করা হয়েছে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এই সংবিধান অনুযায়ী সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক চর্চা আমরা করতে পারছি না।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) দলীয় চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে সংবিধান সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, আমরা সংসদীয় পদ্ধতির মূল স্পিরিট বা আসল ধারণা গ্রহণ করতে পারিনি।

৭০ ধারা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি বা বিবেচনার ওপর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। দলের সঙ্গেই তাদের থাকতে হবে, দলের বাইরে তারা যেতে পারেন না। সংসদকে সব কার্যক্রমের মূল কেন্দ্রবিন্দু করা আমাদের সংবিধান অ্যালাউ (অনুমোদন) করে না, সংসদের কাছে মন্ত্রীদের জবাবদিহিতাও অ্যালাউ করে না। সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা মন্ত্রীদের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করতে পারেন  না।  

তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সরকারপ্রধান সব কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। একারণে, আমাদের দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারা অর্জিত হচ্ছে না। আর একারণেই আগে-পিছে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন তাদের সবাইকে স্বৈরাচার বলা হয়েছে। কিন্তু সবাই মিলে দোষ দিয়েছেন শুধু একজনকে, তিনি হচ্ছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই অপবাদ দিয়েই এরশাদ ও জাতীয় পার্টির ওপর চরম অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, যদি সংবিধানের ৭০ ধারা উঠিয়ে দেওয়া হয় এবং এমপিরা সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন, তাহলে সরকারের স্থায়িত্ব কম হবে। এতে প্রতি মাসেও সরকার পরিবর্তন হতে পারে, কোনো বিল পাস করতেও সমস্যা হবে সরকারের। এমন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে আমরা পূর্ণ গণতন্ত্র চর্চার জন্য উপযুক্ত হতে পেরেছি কি-না তাও বিবেচনা করতে হবে।  

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি সংবিধান সংরক্ষণ করতে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। জাপার বড় অর্জন অন্য কোনো কায়দায় ক্ষমতায় থাকতে না চেয়ে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। অন্যায়-অবিচারের মধ্যেও জাতীয় পার্টি সংবিধান সমুন্নত রাখতে রাজনীতি করে যাচ্ছে।

কাদের বলেন, এরশাদের সময় দেশে তুলনামূলক বেশি সুশাসন বজায় ছিল। জনগণের কল্যাণের কাজে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের তুলনা হয় না। কিন্তু এখনো জাতীয় পার্টির শাসনামলের কুৎসা রটানো হচ্ছে, যেটা সম্পূর্ণ অন্যায়।  

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে নব-জাগরণ শুরু হয়েছে। জাতির প্রত্যাশিত দেশ উপহার দেবে জাতীয় পার্টি।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, দেশে বিশ্বজিৎ হত্যা হয়, আবরার হত্যা হয়। সারের জন্য কৃষককে খুন হতে হয়, এটাকে আমরা গণতন্ত্র বলতে পারি না। এরশাদকে যারা স্বৈরাচার বলেন, তাদের লজ্জা করা উচিত। কারণ, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তাদের সবাইকে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে যেতে হয়েছে।  

তিনি বলেন, দেশের ৮৯ ভাগ উন্নয়ন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে হয়েছে। জেলখানায় থেকে পাঁচটি করে আসনে নির্বাচিত হয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন।

জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান- নুরুল ইসলাম নুরু, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আহসান শাহজাদা, প্রচার সম্পাদক খোরশেদ আলম খুশু, রামপুরা থানা সভাপতি- কাজী আবুল খায়ের, যুগ্ম মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, ছাত্রসমাজের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
এসএমএকে/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।