উদ্ধার হওয়া ওইসব অফিস থেকে দুটি ধারালো দা, চারটি তলোয়ার, একটি কিরিচ ও ফেনসিডিলের সাতটি বোতল ও বেশ কিছু স্ট্যাম্প-ড্যামিও উদ্ধার করা হয়। পরে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ গরুর দুধ দিয়ে কক্ষটি ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে।
এছাড়াও তাদের দখলে থাকা গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভেরচিবাজার, পাঁজিয়া ইউনিয়নের গড়ভাঙ্গা, কেশবপুর সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা, সুফলাকাটি ইউনিয়ন ও বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের ভান্ডারখোলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় দখলমুক্ত করে গরুর দুধ দিয়ে ধুয়ে পুতঃপবিত্র করা হয়। ছয়টি কার্যালয় ধুতে ৪৯ লিটার দুধ ব্যবহার করা হয়েছে।
সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত একাধিক ত্যাগী নির্যাতিত নেতাকর্মী বাংলানিউজকে বলেন, ‘কেশবপুরে গত ছয়টি বছর হাতুড়ি বাহিনী ও গামছা বাহিনী নামে পৃথক দুইটি সন্ত্রাসী বাহিনীর রামরাজত্ব কায়েম করেছিলো। উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতা থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, বিভিন্ন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্কের নাম ছিল হাতুড়ি বাহিনী। ২০১৬ সালে হাতুড়ি বাহিনীর প্রধান আজিজের নেতৃত্বে উপজেলা কৃষকলীগের অফিসটি জোরপূর্বক দখল করে নেওয়া হয়। সেই থেকে তারা ওই ঘরটি তাদের ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করে, সেখানে বসে চাঁদাবাজি ও টর্চার সেল গড়ে তোলে। এমনকি, ওই অফিসের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সাধারণ নেতা-কর্মীদের যাতায়াতে বাধা দিতো হাতুড়ি বাহিনী। ওই বাহিনীর কথার বাইরে গেলেই একাধিক নেতাকর্মী-সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে হাতুড়িপেটা করে রক্তাক্ত জখম করে উপজেলাব্যাপী ত্রাস হিসেবেই আর্বিভূত হয়। ’
‘অন্যদিকে, হাতুড়ি বাহিনীর নেতৃত্বে এবং নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে হাইব্রিড শ্রেণী এবং সুবিধাবাদী কিছু নেতাকর্মীরা মিলে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় দখল করে নেয়। দল ক্ষমতায় থাকলেও গত ছয় বছর এসব নেতাকর্মী বিভিন্ন মিথ্যা মামলা, সন্ত্রাসীদের হামলা-মামলার ভয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছিলেন’
কেশবপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাবেয়া ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেশবপুর আসন থেকে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচকে সাদেকের সহধর্মিনী ইসমাত আরা সাদেক নির্বাচিত হয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী হন। অধিকাংশ সময় তিনি ঢাকায় থাকায় এবং নির্বাচিত এলাকার লোকজনকে না চেনার কারণে একটি সুবিধাবাদী চক্র তাকে ভুল বুঝিয়ে আওয়ামী লীগের পদে থাকা সকল নেতাদের দূরে সরিয়ে দেন। এরপর ‘হাতুড়ি’ ও ‘গামছা’ বাহিনী রামরাজত্ব তৈরি করে গোটা উপজেলার মানুষকে জিম্মি করে তোলে। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের নিচে কৃষকলীগের অফিসটি দখল করে। এছাড়া মাছের ঘের দখল, মাদক ব্যবসা ও সেবন, চাঁদাবাজির মতো কাজ করতেন। ’
গত ২১ জানুয়ারি ইসমাত আরা মৃত্যুর পরে কেশবপুর আসনটি শূন্য হয়। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী করায় গা-ঢাকা দেন কথিত হাতুড়ি বাহিনী ও গামছা বাহিনীর সদস্যরা।
তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার দিনব্যাপী পুলিশের উপস্থিতিতে হাতুড়ি বাহিনীর দখলে থাকা কক্ষটি খুলে ধোয়া-মোছার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময় পুলিশ কক্ষটি থেকে ওই বাহিনীর ব্যবহৃত দুটি ধারালো বেকি, চারটি তলোয়ার, একটি কিরিচ ও ফেনসিডিলের সাতটি বোতল উদ্ধার করে। এরপর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ গরুর দুধ দিয়ে কক্ষগুলো ধুয়ে মুছে ফেলে।
কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনে কখনোই সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দেয়নি, কিন্তু দলীয় অভ্যন্তরীণ কিছু কারণেই কিছু বখাটে যুবক নিবেদিত নেতাকর্মীদের নানাভাবেই অত্যাচার করেছে। তবে, আগামীতে যেন আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কেই সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি-মাস্তানি করতে না পারে সেই উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা কখনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রশ্রয় দেয়নি, ফলে জনগণকেও আরও সচেতন হয়ে এসব দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করতে হবে। ’
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাঈদ বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এসময় ঘরের সানশেডের ওপর থেকে দুটি রামদাসহ ব্যাপক ধারালো দেশীয় অস্ত্র ও ফেনসিডিলের খালি বোতল উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
ইউজি/ইউবি