১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কতিপয় সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। দলের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান বিচারপতি আব্দুস সাত্তার দলটির হাল ধরেন।
গত ৩৭ বছর একজন নারী হিসেবে খালেদা জিয়া বিএনপি পরিচালনা করলেও এই দলে এখনও পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক কম। নির্বাচন কমিশনের নতুন আইন অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দলের নেতৃত্বে ৩৩ ভাগ নারী থাকতে হবে। কিন্তু এখনও সে শর্ত পূরণ হয়নি।
জানতে চাইলে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে শতকরা ১৫ ভাগের ওপরে নারী আছেন। ’
২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ ভাগ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি দলের নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধি পাবে। ’
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরাতো নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করবো। এটা তাদের করা আইন। তবে একইসঙ্গে তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, জনগণ ভোট দিতে না পারায় কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, তারা ভবিষ্যতে সেটা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে। ’
জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে নারী দু’জন
দলের চেয়ারপারসন পদাধিকার বলে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। তাকে বাদ দিলে এই কমিটিতে আর একজন মাত্র সদস্য রয়েছেন যিনি গতবছর ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি হলেন, সেলিমা রহমান।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে নারী আছেন যারা
২০১৬ সালে জাতীয় কাউন্সিলের পরে গঠিত জাতীয় নির্বাহী কমিটিতেও নারীর সংখ্যা নগণ্যই বলা যায়। ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম-মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিভিন্ন সম্পাদকীয়-সহসম্পাদকীয় পদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব পদে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় অনেক কম।
এছাড়া ৭৫ সদস্যের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটিতেও নারী আছেন কেবল ছয়জন। ৩৬ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে নারী এক জন। ১০ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে নারী আছেন দুই জন। এছাড়া তিন সম্পাদক ও ১৫ সহসম্পাদক পদে রয়েছেন নারী। সদস্য পদে নতুন অন্তর্ভুক্ত ১১৩ জনের মধ্যে নারী আছেন ১৭ জন। আগের কমিটিতে ১৮০ জনের মধ্যে নারী ছিলেন ২৫ জন। সব মিলিয়ে ৫২৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে নারীর সংখ্যা ৬৩।
জানতে চাইলে সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএনপিতে নারীর অবস্থান আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিগত কমিটিগুলোতে নারী নেতৃত্ব অনেক কম থাকলেও ২০১৬ সালের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দুজন নারী স্থান পেয়েছেন। এটা পজেটিভ দিক বলে আমি মনে করি। এছাড়া অন্যান্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদেও নারীরা রয়েছেন। ’
নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী ৩৩ ভাগ নারী নেতৃত্ব ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পূরণ হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশা করি আমরা সেটা করতে পারবো। ’
এখন কতভাগ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটিতে শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ নারীর অবস্থান রয়েছে। ’
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে নারী
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটিতে মোট সদস্য ছিলেন ৭৬ জন। তার মধ্যে একজন দল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগে চলে গেছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। আর যারা আছেন তাদের মধ্যে নারী সদস্য আছেন ৬ জন। তারা হলেন- সরোয়ারী রহমান, তাজমেরী এস ইসলাম, শাহিদা রফিক, রোজী কবির, তাহসিনা রুশদির লুনা এবং আফরোজা খান রিতা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী যারা
চেয়ারপারসন ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পর দলের সবচেয়ে বড় পদ ধরা হয় ভাইস চেয়ারম্যান। এই ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন মাত্র নারী নেত্রী আছেন। তিনি হলেন রাবেয়া চৌধুরী। এরপর মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও ৮টি যুগ্ম-মহাসচিবের পদে কোনো নারী স্থান পাননি।
১০টি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের মধ্যে দুজন নারী হলেন- শ্যামা ওবায়েদ ও বিলকিস জাহান শিরীন।
তিনটি সম্পাদকীয় পদে যারা স্থান পেয়েছেন তারা হলেন- মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী-ই-আরা সাফা, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা, স্বর্নিভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা।
সহসম্পাদক রয়েছেন ১৫ জন। এরা হলেন- আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ফাহিমা মুন্নী, রুমিন ফারহানা ও বেবী নাজনীন, শিক্ষা বিষয়ক সহসম্পাদক হেলেন জেরিন খান ও ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ। মহিলা বিষয়ক সহসম্পাদক আফরোজা আব্বাস ও সুলতানা আহমেদ। এরা দুজন বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহসম্পাদক অপর্ণা রায়, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহসম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলি, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সহসম্পাদক শাম্মী আক্তার, স্বনির্ভর বিষয়ক সহসম্পাদক নিলোফার চৌধুরী মনি, তাঁতী বিষয়ক সহসম্পাদক রাবেয়া সিরাজ, নার্সেস ও স্বাস্থ্য সহকারী বিষয়ক সহসম্পাদক জাহানারা বেগম, মানবাধিকার বিষয়ক সহসম্পাদক আশিফা আশরাফি পাপিয়া।
পুরনো কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে যারা নারী আছেন তারা হলেন- রেজিনা ইসলাম, বিলকিস ইসলাম, সাঈদা রহমান জোৎস্না, রওশন আরা ফরিদ, লাভলী রহমান, কাজী হেনা, খালেদা পান্না, শাহিদা আখতার রিতা, নূরজাহান ইয়াসমিন, লায়লা বেগম, রহিমা সিকদার, লিটা বশির, মেহেরুন্নেছা হক, রাজিয়া আলিম, শাহিনা খান, খালেদা ইয়াসমিন, ইয়াসমিন আরা হক, ফেরদৌস ওয়াহিদা, শাহানা আখতার সানু, সাইমুম বেগম, হাসিনা আহমেদ, খালেদা রাব্বানী, রহমান রানী, চমন আরা, নার্গিস আলী এবং জেবা খান।
নতুন যে ১৭ জনকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে তারা হলেন- নাছিমা আক্তার কল্পনা, ফরিদা ইয়াসমিন, সাবেরা সুলতানা, রিনা পারভীন, আয়েশা সিদ্দিকা মানি, নুর জাহান মাহবুব, পিয়ারা মোস্তফা, সিমকি ইমাম খান, আরিফা জেসমিন, মুন্নী, রুখসানা খানম মীতু, সেলিনা রউফ চৌধুরী, এলিজা জামান, সাবেরা আলাউদ্দিন হেনা, রিজিয়া ইসলাম, রাবেয়া আলী এবং তাহমিনা খান।
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আমরাতো নারী নেতৃত্ব বাড়াতে চাই। চেয়ারপারসনসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও এর পক্ষে। তবে বৃদ্ধি করলেইতো হবে না। গুণগত মানসম্পন্ন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেজন্য যাচাই-বাছাই করেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীদের স্থান দেওয়া হয়। আগের তুলনায় নারী নেতৃত্ব যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
এমএইচ/এজে