ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড থেকে জাহিদুর রহমান

পাতায়ায় মহারানীর ‘রাজা’ সোলায়মান

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
পাতায়ায় মহারানীর ‘রাজা’ সোলায়মান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাতায়া (থাইল্যান্ড) থেকে: সোলায়মান। মহারানীর ‘রাজা’।

মহারানীকে দিয়েই প্রবাসে তার জয়যাত্রা।  

যে মহারানীর খোঁজে ছোটেন দেশি- বিদেশি পর্যটকরা। ‘মহারানীর’ আপ্যায়ন আর অতিথি পরায়ণতায় মুগ্ধতা নিয়ে দেশে ফেরেন বাংলাদেশিসহ ভিনদেশিরা।

মহারানীর ঠিকানা থাইল্যান্ডের ঝলমলে বিনোদনের স্বর্গখ্যাত পাতায়ার সেকেন্ড রোড মাইক শপিং মলের বিপরীতে।

এই মহারানী আসলে একটি রেস্টুরেন্ট। বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তা মো. সোলায়মানের বিনয়ী আর আন্তরিক আতিথেয়তার সঙ্গে সাশ্রয়ী মূল্যে সেরা মানের খাবারের স্বাদ নিতে রেস্টুরেন্টটিতে ছুটে যান বাংলাদেশিসহ নানা দেশ থেকে আসা পর্যটকরা।

পাতায়ার মতো বিনোদনের নগরীতে মূলত ‘মহারানী’ ঘিরেই রচিত হয়েছে এক তরুণের প্রতিষ্ঠা ও সাফল্যের অসাধারণ গল্প।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় সাফল্যের সেই গল্পটি শোনান মো. সোলায়মান (৩১)।

বাবা শাহ আলম মালতিয়া। গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার এয়ারপোর্ট থানার সারসী গ্রামে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবিতে অনার্স করেই পাড়ি জমান সৌদি আরবে বড় ভাই মো. আমীরের কাছে। সেখানে জড়িত হন সুপার মার্কেটের ব্যবসায়। নিয়োগ কর্তার (কফিল) সঙ্গে বাদানুবাদ করে মাত্র এক মাসের মাথায় ২০১১ সালে ফিরে আসেন দেশে। দেশে শুরু করেন সিএনজি অটোরিকশার ব্যবসা। সুবিধে করতে না পেরে চলে আসেন থাইল্যান্ডে।

চেষ্টাটা ছিলো রেডিমেড গার্মেন্টসে। সেই ব্যবসার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে সেখানে অবস্থানের সময় একটি বিষয় নজরে এলো তার।

বাংলাদেশি ও ভারতীয় মালিকানাধীন হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর প্রায় একই চেহারা। খাবারের দামের তুলনায় পরিমাণে কম, গুণগত মান, পরিবেশ নিয়ে নানান সমস্যা।

ভাবলেন। এখানে যদি ভালো স্বাদ আর মানের রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরুর পাশাপাশি দামটাও সহনীয় সীমার মধ্যে রাখা যায়, তবে একটা সময়ে এই ব্যবসা করেই টিকে থাকা যাবে এখানে।

একই মানের খাবার। বৈচিত্র্যময় স্বাদ। তবে দাম ৩০ ভাগ কম। এভাবে যাত্রা শুরু করে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

পাতায়ায় সব কিছুতেই যেখানে কমিশন বাণিজ্য, সেখানে ব্যতিক্রম সোলায়মান।

রেস্তোরাঁর অতিথিদের কম খরচে দেশে কথা বলার কলিং কার্ড, ট্যাক্সি ডেকে দেওয়া, কোথায় বেড়াবে, সাশ্রয়ী মূল্যে তার পথ দেখিয়ে দেওয়া। এসব কিছুই তিনি করেন হাসিমুখে। এছাড়া পাতায়ায় পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে যেকোনো স্থানে খাবার পৌঁছে দেন ফ্রি ডেলিভারি চার্জে।

মো. সোলায়মান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি সেবা আর মান দিয়েই টিকে থাকতে চাই। আমার রেস্টুরেন্ট ব্যবসা নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ। ’

‘আমার এখানে ভারতীয় ৩৫০ আইটেম খাবারের পাশাপাশি থাই ও বাংলাদেশি খাবার ঘরোয়া পরিবেশে পরিবেশন করা হয়। ’

‘আমার রেস্তোরাঁর কোনো বিজ্ঞাপন লাগে না। একজনের মাধ্যমেই অন্যরা আসেন। আবার তাদের মাধ্যমে নতুন কেউ। যে কারণে সেরা স্বাদের পাশাপাশি সেবাটাও দিতে হয় অনন্য। বলতে পারেন সেবাটাই আসল পুঁজি। ’

মহারানীর আরেকটি বৈশিষ্ট হলো টেবিলে টেবিলে মোবাইল চার্জার। ফ্রি ওয়াইফাই। সঙ্গে বাংলাদেশিদের জন্য ফ্রি মিনারেল ওয়াটার।

২০১১ মিরপুরে সুরাইয়া আক্তারকে বিয়ে করেন সোলায়মান। এই দম্পতির ঘর আলো করে রেখেছে আসল মহারানী তিন বছরের কন্যা সুবাইতা রহমা সুহা (৩)।

সোলায়মানের দৃঢ় উচ্চারণ, ‘আমার মতো খাবারের স্বাদ এখানে দ্বিতীয়টি আর পাবেন না। ’

অবশ্য রেস্তোরাঁ ঠাসা দেশি-বিদেশি অতিথিদের খাবারের প্রশংসাই সমর্থন করে সোলায়মানের কথা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
এইচএ/

** সেবার মাধ্যমেই প্রবাসে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন বাবুল
** 
কোন স্যাটার ডে, সান ডে নেই!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।