ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নিউইয়র্ক

১ লাখ দুঃস্বপ্নে, ৫ লাখ অস্বস্তিতে

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
১ লাখ দুঃস্বপ্নে, ৫ লাখ অস্বস্তিতে

স্বস্তি উবে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মন থেকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর যে ক’টি দিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম আর যতজনের সঙ্গে কথা হয়েছে তাতে সেটাই মনে হয়েছে।

স্বস্তি উবে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মন থেকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর যে ক’টি দিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম আর যতজনের সঙ্গে কথা হয়েছে তাতে সেটাই মনে হয়েছে।

আর দেখতে পেয়েছি দেশটিতে যে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন, যারা রয়ে গেছেন আনডকুমেন্টেড। তাদের শুরু হয়েছে দুঃস্বপ্নের দিন-রাত্রি।   
 
ভূগোলকে বাংলাদেশের ঠিক অপর পৃষ্ঠের দেশটিতে ভাগ্যের সন্ধানে ৫ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী হয়েছেন। যাদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে যারা দেশটিতে থাকলেও নথিপত্রে অন্তর্ভূক্ত হননি। রয়ে গেছেন অবৈধ। যার সংখ্যা লক্ষাধিক। আর এখন সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তা তাদের ঘিরেই।  
 
এছাড়া সার্বিকভাবে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের মুসলিম অভিবাসীদের প্রায় সবারই রয়েছে একটা বড় অস্বস্তি। কারণ সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মুসলমানদের নতুন করে প্রোফাইল তৈরি করবেন। অনেকেই বলছেন তার এ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানবিরোধী। কিন্তু তাতে কি এসে যায়।
 
নির্বাচনের আগে ট্রাম্প যখন এসব কথা বলতেন, তখন অনেকেই গা করতেন না। প্রধানত এ কারণে যে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই ছিলো না। আর শেষ পর্যন্ত যখন তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন তখনও প্রাথমিকভাবে অনেকে মনে করেছিলেন, ওসব কথা ছিলো নিতান্তই ভোটের রাজনীতি। প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্প তেমন কিছু করবেন না। কিন্তু এখন যখন সে কথা আবারও উচ্চারিত হচ্ছে। ট্রাম্পের নিয়োগকৃত কিংবা মন্ত্রিসভার জন্য বাছাইকৃতরা যখন সেই একই ইঙ্গিত দিচ্ছেন- যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের নতুন করে নিবন্ধিত হতে হবে। তাদের প্রত্যেকের প্রোফাইল তৈরি করা হবে। কিংবা যখন একথাও বলা হচ্ছে, যাদের ট্রাম্পকে ভালো লাগবে না তারা দেশটি ছেড়ে চলে যেতে পারে, তখন সেখানে সংবিধান, মানবাধিকার কিংবা আন্তর্জাতিক আইন কোনোটাই কাজে দেবে না। সেখানে একটাই নীতি চলবে যেটি ট্রাম্পনীতি! আর তাতেই বাড়ছে এ অস্বস্তি।  
 
সেটি সার্বিক। কিন্তু লক্ষাধিক আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশি; যারা যুক্তরাষ্ট্রে একবার ঢুকে পালিয়ে থেকে গেছেন, নানা অবৈধ পথে ঢুকেছেন, কিন্তু নথিভুক্ত হননি তাদের জন্য কি ঘোর অমানিষা অপেক্ষা করছে।     
 
অথচ এই সেদিনও ছিলো স্বস্তির। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৪ সালের নভেম্বরের শেষ নাগাদ একটি খবর, আর তার আগে ২০১৩ সালের জানুয়ারির একটি খবর তাদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছিলো। ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রায় ৫০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ ৫০ লাখের মধ্যে ১০ হাজার বাংলাদেশি ছিলেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে সুবিধা ও অধিকার বঞ্চিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ধারণা করা হচ্ছিলো বৈধতা পেলে এসব বাংলাদেশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।
 
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলতেন, আমেরিকার মূল শক্তি হচ্ছে ইমিগ্র্যান্টরা। কিন্তু ট্রাম্পতো সেটা মনে করছেন না। বরং ইমিগ্র্যান্টদের আমেরিকার শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে নানা ফন্দি-ফিকির আঁটছেন।
 
ট্রাম্প সমর্থক একজন বিচারকতো সরাসরি বলেই ফেলেছেন, যেসব অভিবাসীদের ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভালো লাগবে না তারা চাইলে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে।  
 
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এর সংখ্যা। দেশটিতে ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী ১ কোটি ১১ লাখ অবৈধ অভিবাসী ছিলো। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩.৫ শতাংশ। এ বিশাল পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের হিস্যা কম হলেও একটি বড় অংকেই রয়েছে। নানা হিসাবেই যার সংখ্যা এক লাখের বেশি।
 
এরাই সুযোগ পেয়েছিলেন বৈধতার। বারাক ওবামা তার নির্বাহী আদেশেই তা করেছিলেন। কিন্তু সে আদেশের পর তার প্রয়োগ হতে না হতেই এসে গেলো নতুন খাড়া। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্ন আসছে তা আটকে দিতে রুল দেওয়া হবে। আর সেটাই হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। ফলে নির্বাহী আদেশ যেমন আটকে গেছে, অবৈধরাও অবৈধই থেকে গেছেন। আর এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প তথা রিপাবলিকানরাতো ওবামার সব নির্বাহী আদেশই বাতিলের কথা বলছেন।  
 
এর আগে ওবামা সিনেটের সমর্থন পেয়েছিলেন, কিন্তু এবার সিনেট আর কংগ্রেস দু’টোই রিপাবলিকানদের দখলে। ফলে তাদের মর্জি মতোই কাজ হবে, ঠেকানোর কোনও সুযোগ নেই।  
 
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিরা মূলত নিউইয়র্ক সিটি, ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলস, ফ্লোরিডা, মিশিগান ও টেক্সাসে থাকেন।  
 
প্রেসিডেন্ট ওবামার ঘোষণা অনুযায়ী কথা ছিলো আমেরিকায় যারা ৫ বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছেন, আইন মেনে চলছেন এবং ট্যাক্স দিচ্ছেন আর ব্যাক গ্রাউন্ড চেকে যাদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা পাওয়া যাবে না তারা অস্থায়ী কার্ড এবং ওয়ার্ক পারমিট পাবেন। এ দিয়ে তারা কাজ করতে পারবেন এবং তাদের বহিষ্কার করা যাবে না। এছাড়া যাদের আমেরিকান পাসপোর্টধারী সন্তান রয়েছে বা বৈধ কাজগপত্র রয়েছে তাদের বাবা-মাও অস্থায়ী কার্ড পাবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। আর এখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সেটাই হয়ে উঠেছে দুঃস্বপ্ন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
এমএমকে/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।