নারী ক্রিকেট দলের কোচ হয়ে বাংলাদেশ এসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ব্যবস্থাপনায় বেশ মুগ্ধ তিনি। সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় কাজেও বেশ ভালো সময় কাটছে তার।
শিক্ষক হয়ে শিষ্যদের যা শেখাচ্ছেন তাতে সাড়া মিলেছে দারুণ। আসছে দুর্লভ সাফল্যও। তবে এখনই ফলের পরিসংখ্যানে যেতে নারাজ সাবেক ভারত নারী ক্রিকেট দলের এই সদস্য।
চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় টি-২০ নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপই এখন তার একমাত্র লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে এমনটাই জানালেন তিনি। শোনালেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের আইসিসি'র টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তিতে তাদের প্রচেষ্টার কথাসহ আর অনেক কিছুই। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো-
বাংলানিউজ: বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে নিয়ে আপনার লক্ষ্যটা কী?
দেবিকা: একজন সহকারী কোচ হয়ে আমি বলবো আমরা খুবই ভাগ্যবান যে জেনি জৈনের মতো একজন হেড কোচ পেয়েছি। আমার কাজ হবে তার পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়ন করা। তিনি ব্যাটিং দেখেন, আর আমি বোলিং। আমরা আমাদের ভূমিকা ভালো করেই জানি। আপনি যখন টিম হয়ে কাজ করবেন তখন ভালো ফল পাবেন-ই এবং আমরা তাই পাচ্ছি। তবে এখন আমাদের লক্ষ্য বিশ্বকাপ।
বাংলানিউজ: দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর টানা তিনটি দুর্দান্ত সিরিজ জিতলেন? ম্যাজিকটা কী?
দেবিকা: আমি এটাকে ম্যাজিক বলবো না। মূল ব্যাপারটা হচ্ছে- আমরা ওদের (ক্রিকেটার) খুব ভালো করে বুঝি। আপনি বললেন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে আমরা এভাবে হারলাম- হ্যাঁ, আমি ওদের সঙ্গেই ছিলাম। কিন্তু তখন হেড কোচ ডেভিড ক্যাপেল। আমি শুধু উনাকে সহযোগিতা করেছি মাত্র। তবে নতুন প্রধান কোচ আসার পরে আমি যে ইনপুট দিয়েছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এখানে এসেই আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা তার সঙ্গে শেয়ার করেছি এবং কাজও হয়েছে। তবে আমার ধারণা এই মেয়েদের ভেতরে প্রতিভা আগে থেকেই ছিলো। আমরা শুধু তা বের করে এনেছি।
বাংলানিউজ: দলের কয়জনকে আপনার প্রতিভাবান বলে মনে হয়েছে?
দেবিকা: সিলেটে যখন আমরা ক্যাম্প করেছি তখন আমাদের প্রাথমিক স্কোয়াডে ৩০ জন মেয়ে ছিলো। যেহেতু হেড কোচ ক্যাপেল ছিলেন তাই ওদের প্রতিভা ওভাবে পরখ করে দেখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু বর্তমান ৩০ সদস্যের যে স্কোয়াডটি রয়েছে, সেখানে বেশিরভাগই প্রতিভাবান। আমি বলবো খুব শিগগিরই বাংলাদেশ বিশ্বে একটি শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হবে।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নারী ক্রিকেট দলের টেস্ট মর্যদার জন্য আবেদন করবে। এই মিশনে আপনি ও আপনাদের অবদান কতখানি রাখতে হবে বলে মনে করেন?
দেবিকা: কোচ হিসেবে আমি মনে করি ফলাফল নয়, যদি আমার প্রক্রিয়া সঠিক থাকে তাহলে ফল একদিন আসবেই। গত দুই মাসে সেটাই হয়েছে। আমরা শুধু মাত্র প্রক্রিয়াটাকে অনুসরণ করছি। এভাবে যদি আমরা চালিয়ে যেতে পারি আমার মনে হয় না বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের টেস্ট মর্যাদার পথ দীর্ঘায়িত হবে।
বাংলানিউজ: এই বিশ্বকাপে ভালো কিছু আশা করা সম্ভব?
দেবিকা: অবশ্যই এবং আমরা চাইও সেটা।
বাংলানিউজ: আপনার কয়েকজন প্রতিভাধর ছাত্রীর নাম বলবেন, প্লিজ।
দেবিকা: আসলে ওরা সবাই ভালো। এত ভালো যে কখনও কখনও সেরা একাদশ গঠনও কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আমরা যেটা করি প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে টিমের প্রয়োজন অনুযায়ী একাদশ সাজাই।
বাংলানিউজ: আপনি কখনো এভাবে ঢাকায় থাকেননি। কেমন লাগছে?
দেবিকা: ট্রাফিক জ্যাম ছাড়া এখানকার সবকিছুই অসাধারণ। বিসিবি আমাদের অনেক যত্ন নেয়। আমরা সত্যিই উপভোগ করছি। এখানকার খাবার, আমরা যেখানে থাকছি সবই ভালো। তবে যেহেতু আমি, হেড কোচ ও ট্রেনার ভারতীয় সেহেতু কখনও কখনও খাবারের ব্যাপারটি কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে আমিষের ঘ্রাণ। এছাড়া সব কিছু ঠিকই আছে।
বাংলানিউজ: এদেশের মানুষ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
দেবিকা: খুবই ভালো। এখানকার সবাই আমাদের বাড়তি যত্ন নেয়। সবসময় চেষ্টা করে যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয়। আসলে কোনো সমস্যাও নেই। সত্যি কথা বলতে এমন আতিথেয়তা আমরা আশা করিনি।
বাংলানিউজ: সবাই কোরবানি ঈদ উদযাপন করছে, এ নিয়ে আপনার কোনো স্মৃতি আছে কী?
দেবিকা: ভারতে আমার কয়েকজন মুসলিম বন্ধু রয়েছে। এখনও মনে আছে, ছোটবেলায় ঈদের সময় আমি ওদের বাসায় গিয়ে খোরমা খেতাম। যেহেতু আমি নিরামিষভোজী, আমিষ খেতে পারি না। তবে ওটা খুব মজা করে খেতাম। এখন আর খাওয়া হয় না। তাই খাবারটি ভীষণ মিস করি। ভারতে কোরবানি ঈদকে ‘বকরি ঈদ’ বলে। কারণ ওখানে এইদিন বকরি জবাই করা হয়।
বাংলানিউজ: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
দেবিকা: বাংলানিউজকেও অসংখ্য ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
এইচএল/এমএ/এমএইচএম