ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

সান্দাকফু ট্রেক-৬

পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের চূড়ায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের চূড়ায় ছবি: ব‍াংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কালাপোকরি মূলত নেপালি গ্রাম। এর একপাশে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চেকপোস্ট। বিকেলের প্রচণ্ড বাতাস আর মেঘের দৌরাত্ম্য উপেক্ষা করে আমরা হাইট গেইন করার উদ্দেশ্যে চেকপোস্টের পাশে চড়াইয়ের দিকে গেলাম। দেখলাম জওয়ানরা ভলিবল খেলছে। এই উচ্চতায় এ ধরনের খেলা শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এর মধ্যে ডম্বর বললো এখানে নাকি এক পবিত্র গুহা রয়েছে। সেখানে যেতে হলে আরও উঁচুতে যেতে হবে।

যেই ভাবা সেই কাজ। সবাই মিলে চললাম গুহা দর্শনে।

এখানে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে প্রেয়ার ফ্ল্যাগ। পূজার উপরকরণসহ বেশ কিছু মাটির পাত্র পড়ে আছে গুহার সামনে। চারিদিকে প্রচণ্ড বেগে হাওয়া বইছে। নির্জন এ জায়গায় আমরা ক’জন নীরবে দাঁড়িয়ে আছি। হিমালয় আমাদের অনেকের কাছে সামর্থ্য প্রমাণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হলেও আসলে এটি নিজেই এক জীবন্ত সত্ত্বা। কত দর্শন, ধর্মীয় রহস্যময়তা নিয়ে হিমালয় প্রতিদিন নিজেকে উন্মোচিত করে নতুনভাবে। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মূল তীর্থগুলোর প্রায় সবই হিমালয়ের অন্দরে। ফলে এখানকার স্থানীয় মানুষদের কাছে হিমালয় শুধু গড়পরতা অন্য আর দশটা আবাসের মতো না, হিমালয়ের আরেক নাম তাই দেবভূমি।

ছবি: ব‍াংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমএর মধ্যেই আ‍ঁধার নেমে এলো। তুমুল আড্ডা লজের কিচেনে। স্থানীয় পানি ছাঙ্গ সহযোগে সান্ধ্যকালীন পানাহার করলেন কেউ কেউ। আমি কিন্তু কফি। এরপরে আসলো রাতের খাবার। আগেই অর্ডার করা ছিলো খিচুড়ি আর ইয়াকের মাংস। এটি অবশ্য আমার আর মোস্তাফিজ ভাইয়ের উৎসাহেই। কিন্তু প্রথম গ্রাস থেকেই আমাদের অবস্থা হলো বাতাস ভরা বেলুনের হঠাৎ চুপসে যাওয়ার মতো। অনেক দিন আগের শুটকি করা মাংসের ঘ্রাণ ঠিক আমাদের চেনা খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে যায় না। ফলে একটু খেয়েই রেখে দিতে হলো। তবে খিচুড়ি খেলাম আকণ্ঠ। এরপর এক দৌড়ে বিছানায়।

ছবি: ব‍াংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমরোদেলা সকাল ঘুম ভাঙিয়ে দিলো নতুন এক চ্যালেঞ্জের আহ্বান জানিয়ে। আজই সেই দিন। আমাদের প্রথম লক্ষ্য সান্দাকফু শীর্ষে উঠবো আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। ৩১৮৬ মিটার উচ্চতার কালাপোকরি থেকে আমরা যাবো পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ বিন্দু ৩৬৩৬ মিটারে। মাঝখানে পড়বে ৩২৮০ মিটার উচ্চতার বিকেভঞ্জন। কালাপোকরি থেকে সান্দাকফু ছয় কিলোমিটার দূরে। বিকেভঞ্জন পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি সমতল। এরপর থেকে শুরু হয়েছে প্রাণপণ চড়াই। আমি রওনা দিয়েছি সবার পরে।

ছবি: ব‍াংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবিকেভঞ্জনে এসে অনেককেই ধরে ফেললাম। গাইড বলেছিলো সান্দাকফু পর্যন্ত উঠতে চার ঘণ্টা লাগবে। তখন আর সময়ের হিসাব কে রাখে। বিকেভঞ্জন থেকে নাক-মুখ বন্ধ করে শুধু উঠতে লাগলাম। সত্যি কথা বলতে কি তখন আর পথের সৌন্দর্য দেখার কোনো অবকাশ ছিলো না। আর আবহাওয়াও অন্য দিনের মতো খারাপ হতে লাগলো। বাতাস আর মেঘ। বিকেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু শীর্ষ যাওয়ার দুটো রাস্তা গেছে। একটি ভারত এবং অপরটি নেপালের সীমানা দিয়ে। আমি ভারতীয় অংশ ধরলাম। মাঝখানে অনেক খানি রাস্তা শর্টকাটে পাহাড়ি চড়াই বেয়ে মেরে দিলাম।

ছবি: ব‍াংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমএর মধ্যে রাস্তায় আর কারও সঙ্গে দেখা হয়নি। এভাবে বোধহয় ঘণ্টাখানেক চলেছিলাম। এ সময় বেশ কয়েকজন ট্রেকারের সঙ্গে দেখা হলো যারা আমার বেশ আগেই রওয়ানা দিয়েছিলেন। তাদের কাছ থেকেই শুনলাম সান্দাকফু আর বেশি দূরে নয়। দেখা হয়ে গেলো আগের দিনের সঙ্গী প্রিয়ব্রত দা'র সঙ্গে। আবার আড্ডা জমলো এবং যখন ভাঙলো তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম সান্দাকফু শীর্ষ থেকে আর খানিকটা নিচে আছি।

ছবি: ব‍াংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমমিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। মানেভঞ্জন থেকে ট্রেক শুরুর তিন দিনের মাথায় পৌঁছে গেলাম সান্দাকফু। এর আগে আমার ডিঙোনো সর্বোচ্চ পাহাড় ছিলো ১০৫২ মিটার। ফলে এখন পর্যন্ত এই ৩৬৩৬ মিটারই আমার জন্য এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এটি একেবারে কঠিন কোনো ট্রেক না। যারা ভবিষ্যতের জন্য হিমালয়ের স্বপ্ন দেখেন তাদের জন্য সান্দাকফু হতে পারে আদর্শ।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়:০৭২০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
এএ

**পাহাড়ি নেপালি গ্রাম কালাপোকরিতে
** ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় খিচুড়ি-ডিমে ভোজ
** যে শহর অর্ধেক নেপাল, অর্ধেক ভারতের
** পিচঢালা রাস্তার ওপারেই নেপাল
** ভালোয় ভালোয় পার বাংলাবান্ধা সীমান্ত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।