ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে গেলেন সন্তানরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে গেলেন সন্তানরা রাতের আঁধারে বৃদ্ধা ফুজলী বেগমকে রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলেন ছেলেরা। ছবি: বাংলানিউজ

নড়াইল: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামের পাঁচ সন্তানের জননী ফুজলী বেগম (৮৬)। স্বামী ছামাদ শেখ মারা গেছেন ৩০ বছর হলো। অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে তিন ছেলে আর দুই মেয়েকে বড় করেছেন। 

ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। এখন পাঁচ ছেলে-মেয়ে নিজ নিজ সংসারে ভালোই আছেন।

কিন্তু তাদের কারও সংসারেই বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই হয়নি। মাকে খেতে-পরতে দিতে চায় না কোনো সন্তানই। তাই তো মাকে রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে ভ্যানে করে নিয়ে বাঁশ ঝাড়ের নিচে রাস্তায় ফেলে গেছেন ছেলেরা।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে। বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বড় ছেলে ডাকু শেখের বাড়িতে রেখে এসেছেন। বর্তমানে ছেলের ঘরের বারান্দায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন ওই বৃদ্ধা।

স্থানীয়রা জানান, ৩০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে তিনি ছেলে-মেয়েদের বড় করেছেন। এখন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এখন তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। ছেলে-মেয়েদের কাছে বোঝা (বিরক্ত) হয়ে গেছেন তিনি। তিন ছেলের আলাদা সংসার থাকলেও কোনো ছেলেই তার দায়িত্ব নিতে চান না। তাই রাতে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে আসেন তারা। গ্রামের লোকেরা ছেলেদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও ছেলেরা তার দায়িত্ব নিতে নারাজ। পরে ভোরে স্থানীয়রা পুলিশের ভয় দেখিয়ে বড় ছেলে ডাকু শেখের বাড়িতে রেখে এসেছেন তাকে।  

একই গ্রামের কলিন্স বলেন, ওই বৃদ্ধাকে রাস্তার পাশে একটি প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে শুইয়ে রেখে গিয়েছিলেন তার ছেলেরা। আমরা গিয়ে দেখি, তার শরীরে অনেক পোকামাকড় ভরা। এ দৃশ্য দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।  

কুচিবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য গোলাম সরোয়ার বলেন, আমরা গ্রামের লোকজন বৃদ্ধার ছেলেদের অনেক অনুরোধ করেছি। কোনো ছেলেই মায়ের দায়িত্ব নিতে চায় না। আমরা সবাই তার ছেলেদের (বৃদ্ধার) বলেছি, আমরা (গ্রামের মানুষ) সবাই মিলে বৃদ্ধার খাবার দেবো, তোমরা (ছেলেরা) শুধু বৃদ্ধার থাকার ব্যবস্থা করো। কিন্তু ছেলেরা কেউই মায়ের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না।  

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধার ছেলেরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী বনি আমিন বলেন, আমি বর্তমানে একটি কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান,  বিষয়টি তার জানা ছিল না। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ