রাজবাড়ী: পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার প্রত্যন্ত বাড়াদী গ্রামে বেনারসি শাড়ি তৈরির ধুম পড়েছে।
প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে শাড়ি কারিগরদের ব্যস্ততা।
সরেজমিন বাড়াদী গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বেনারসি তৈরিতে মগ্ন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষরা। ঈদ নিকটাবর্তী হওয়ায় তাদের কারো দম ফেলবার ফুসরত নেই যেন।
কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক একটি শাড়ি তৈরিতে অন্তত ৭ থেকে ১০ দিনের মতো সময় প্রয়োজন হয়।
এলাকা ঘুরে জানা গেলে, রাজবাড়ীতে অনানুষ্ঠানিক বেনারসি পল্লীর শুরুর কথা। প্রায় ১০ বছর আগে বাড়াদী গ্রামের যুবক লিটন মল্লিক ঢাকার মিরপুরের বেনারসি পল্লী থেকে বেনারসি শাড়ি তৈরির প্রশিক্ষণ নেন।
এরপর তিনি নিজ গ্রামে ফিরে এসে নিজস্ব উদ্যোগে অর্ডার এনে গ্রামের বেকার যুবক, বাড়িতে কাজের ফাঁকে বসে থাকা নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বেনারসি পল্লী গড়ে তুলেছেন বালিয়াকান্দির বিভিন্ন গ্রামে।
বিয়ে ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য এ দুই ধরনের বেনারসি শাড়ি তৈরি করছেন লিটন ও তার কর্মীরা। এসব প্রতিটি শাড়ির বাজার মূল্য ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে। রাজবাড়ী থেকে এসব বেনারসি শাড়ি তৈরি করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকার মিরপুরের বেনারসি পল্লীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
লিটন মল্লিক বাংলানিউজকে জানান, ২০০৬ সালে তার নিজের ব্যবহৃত বাইসাইকেলটি বহরপুর হাটে মাত্র ২৫০০ টাকা বিক্রি করেন। সে টাকা দিয়ে ঢাকার মিরপুর থেকে সামান্য কিছু বেনারসির কাঁচামাল নিয়ে এসে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেন তিনি।
প্রথমবারেই তিনি সাফল্যের মুখ দেখেন। এরপর বড় পরিসরে কাজের উদ্দেশ্যে তিনি বাজারে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে পুরোদমে নেমে পড়েন। এর মধ্যেই বহরপুর, রংপুর, হুলাইল, সারুটিয়া, বাড়াদী, পদ্মদি, দক্ষিণবাড়ি ও আনন্দবাজার এলাকার বেকার যুবক-তরুণীরা ভিড় জমায় বেনারসি কাজ শেখার জন্য। তিনি বেকার ও দরিদ্র পরিবারের গৃহবধূদের এ প্রশিক্ষণ দেন।
লিটন মল্লিক জানান, একটি ফ্রেম থেকে তার এখন ১৪টি ফ্রেম হয়েছে। এসব ফ্রেমে বহরপুর, রংপুর, হুলাইল, সারুটিয়া, বাড়াদী, পদমদি, দক্ষিণবাড়ি ও আনন্দবাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বেনারসি তৈরির কাজ চলছে। বছরে ৮/৯ মাস চলে এ বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ।
তিনি আরো জানান, এ অঞ্চলের অনেক বেকার নারী-পুরুষ এ কাজে এখন সাবলম্বী হয়েছেন। দরিদ্র পরিবারের গৃহবধূরা বাড়ির কাজকর্মের অবসরে বেনারসি শাড়ির কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।
লিটন বলেন, ভালো মানের বেনারসি তৈরির জন্য বড় ধরনের পুঁজির প্রয়োজন। কিন্তু তার তেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় কাজ ভালভাবে চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে এ কাজে সরকারি সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই বাড়াদী গ্রাম হতে পারে দেশের একটি আরো একটি প্রসিদ্ধ বেনারসি পল্লী।
তিনি অভিযোগ করেন, ব্যবসা বৃদ্ধিতে ঋণের জন্য কয়েকটি ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি। রাজবাড়ীতে এ শিল্পের বিকাশে সরকারি সহায়তা পেলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বেনারসি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৪