ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাংলার প্রাণের কাছে

বাংলার প্রাণের কাছে

বাদল দিনে নেই বৃষ্টির খনা

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৬
বাদল দিনে নেই বৃষ্টির খনা ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুড়িগ্রাম থেকে: ভোর থেকেই ভাদ্রের গুমোট আকাশটার মন ভালো নেই! কখনও অঝোর ধারায়, কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি জলকণার ঝলকে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে চলেছে সে। কালোবরণ সে আকাশের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই মাঠে গরু নিয়ে চাষে নেমেছেন গাঁয়ের কৃষক।

শহুরে সাহেবরাও তাই। এসবের মধ্যেই নিত্যদিনের কর্মব্যস্ততা।

শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বরের) ভোরে ধরলা তীরের ছিমছাম শহর কুড়িগ্রামের গতিপ্রকৃতি ছিলো এমনই।

শহর ছেড়ে একটু ভেতরে গেলেই বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ আর গ্রাম। যেখানে শুধু নিরেট প্রাণের ছোঁয়া। যেখানে এখনও কালেভদ্রে শোনা যায়, ‘যদি বর্ষে আগুনে, রাজা যায় মাগনে’, ‘যদি বর্ষে পুষে, কড়ি হয় তুষ’ এর মতো সব খনার বচন। যা মূলত বাংলার চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতিরই অংশ।
প্রবীণদের ভাষ্য, যেগুলো কৃষিকাজের প্রথা ও কুসংস্কার, আবহাওয়া জ্ঞান এবং শস্যের যত্ন সম্পর্কিত উপদেশে বেঁধেছে আকর। চটুল খনার বচনও নেহায়েত কম নেই।

উত্তর জনপদের কৃষিজীবী গ্রামীণ সমাজে খনার বচনসহ আরও অনেক ছড়া প্রচলিত। স্যাটেলাইট যুগের আগে এসব বচন ছিলো মুখে মুখে। এখনও প্রত্যন্ত কোনো গাঁয়ের কৃষাণী এসব বচন কাটেন সুযোগ পেলেই।

এ অঞ্চলে ‘আছে গরু না বয় হাল তার দুঃখ চিরকাল’, ‘আড়িয়া গরুর হাল আর চেংরা মানুষের গুজরান একই কথা’, ‘আলু তা আলু, আলু যায়া আলু’, ‘নাও ঘোড়া নারী, যখন যারা তখন তারি’, ‘জম জামাই ভাগন্যা-এই তিন নয় আপন্যা’ প্রচলিত।

কৃষিতত্ত্বভিত্তিক ছোট ছোট এসব খনার বচন বা ছড়া বছরের পর বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। রয়েছে বৃষ্টি নিয়ে আলাদা ছড়া বা বচন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘যদি বর্ষে আগুনে, রাজা যায় মাগনে’, ‘যদি বর্ষে পুষে, কড়ি হয় তুষ’। ইতিহাসে জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী ও ভবিষ্যৎ বক্তা হিসেবে জায়গা করে নেওয়া খনার মুখে মুখে সৃষ্টি অন্য বচনের মতো বৃষ্টিবচন বা কৃষি নিয়ে বচন এখন শোনা যায় কম। ভরবর্ষায়ও তাই মাটির কৃষকের কাছে অনুপস্থিত খনা।
ইতিহাস বলে, আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে এসব খনার বচন বা ছড়ার উৎপত্তি। স্বতন্ত্র প্রকৃতি, কাব্যরস ও গীতিধর্মিতায় ভরপুর বাংলা লোকসাহিত্যের জনপ্রিয় এ শাখার রয়েছে ভণিতা। যা দিয়ে মানুষকে সহজে আকৃষ্ট করা যায়। সব মিলে প্রাত্যহিক জীবনের মূল্যবান নীতিমালা-নির্দেশনাও।

জানা যায়, উড়িয়া ও অসমিয়া ভাষায় রক্ষিত খনার বচনে প্রাচীনত্বের ছাপ রয়েছে।

আর মৌখিকভাবে প্রচলিত ও স্মৃতি-আশ্রিত বলে বহু বচন লোপ পেয়েছে বাংলায়। ভাষার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে খনার বচনেও ভাষাগত পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করেন অনেকে।

** বাহে শোন মোর ভাওয়াইয়া গান
** ‘আয়সাই আব্বাস গাইলেন হাঁকাও গাড়ি চিলমারী’
** আহা! সেকি সুর শিরিষের সারিন্দায়! (ভিডিও)
** হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দর এ রে...
** বাংলার প্রাণের কাছে বাংলানিউজ, সঙ্গী হোন আপনিও
** শেকড়ের সন্ধানে উত্তর জনপদে বাংলানিউজের মাহবুব ও নূর


বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৬
এমএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলার প্রাণের কাছে এর সর্বশেষ