ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাংলার প্রাণের কাছে

রংপুর আকরভূমি, ভাওয়াইয়া ঐতিহ্য

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬
রংপুর আকরভূমি, ভাওয়াইয়া ঐতিহ্য ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রংপুর ঘুরে: ‘ভাওয়াইয়া আমাদের ঐতিহ্য, আর এ গানের আকরভূমি রংপুর। উত্তরবঙ্গের শিকড় ভাওয়াইয়াকে ধরে রাখতে চাই, টিকিয়ে রাখতে চাই।

‘বাহের দেশ’ রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এ লোকগীতি নিয়ে এমনই স্বপ্ন দেখেন কবি ও গীতিকার খন্দকার মো. সাইদুর রহমান।

পেশায় ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করেপোরেশন (বিএডিসি) একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। কৃষি প্রকৌশলী হলেও মননে একজন ভাওয়াইয়াপ্রাণ মানুষ। বর্তমানে অবসর জীবনের পুরোটা সময় ভাওয়াইয়ার প্রসারে ব্যয় করছেন তিনি।
 
রংপুর শহরের ইঞ্জিনিয়ারপাড়ায় ভাওয়াইয়া অঙ্গনের কার্যালয়ে বসে বাংলানিউজকে খন্দকার সাইদুর বলেন, ভাওয়াইয়া আমাদের প্রাণের এবং মাটির গান। এটিকে নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।

‘আমরা শত অবমাননার পরও রক্তের সঙ্গে মিশে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কাজ করছি। একদিন আমি কিংবা আমরা থাকবো না, কিন্তু ভাওয়াইয়া থেকে যাবে। ’
 
তার ভাষ্য, ‘আগের মতো না থাকলেও কেউ না কেউ এর বাহক-ধারক হবে। কেননা হাজার বছর ধরেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে যাবে ভাওয়াইয়া। ’

নদী-মাতৃক কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, গাইবান্ধায় লোকগীতির জনপ্রিয়তা এখনও অটুট।

খেতে-খামারে কিংবা জলাশয়ে মাছ ধরার সময়ে হঠাৎ গুনগুনিয়ে নিজস্ব ঢং ও ভাষায় গেয়ে ওঠেন কৃষক-দিনমজুররা।

তবে কালের পরিবর্তন আর আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে লোকজ-সংস্কৃতিটি। এখন আগের মতো সন্ধ্যে হলেই বসে না ভাওয়াইয়ার আসর। পহেলা বৈশাখ কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

নতুন প্রজন্মের কাছে এ সুর পৌঁছে দিতে রংপুর ভাওয়াইয়া অঙ্গন, লালমনিরহাটের আরশিনগর, কুড়িগ্রামের উলিপুরে বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমি কাজ করছে।

তবে এসব প্রতিষ্ঠানে উচ্চবিত্ত কিংবা শিক্ষিত পরিবারের লোকজন তাদের সন্তানদের পাঠান না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ভাওয়াইয়া অঙ্গনের সভাপতি খন্দকার সাইদুর রহমান বলেন, খুবই গরিব পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এখানে আসে। অন্য জায়গায় কিংবা বাড়িতে শিক্ষক রাখতে না পেরে এখানে আসে তারা।
 
‘উচ্চ বিত্ত ঘরের কেউ আসে না। তাদের ধারণা এটা গরিব মানুষের গান। এখানে আসবো কেন? কিন্তু এটাই আমাদের শেকড়ের গান। এ গানকে ভালোবাসতে হবে। ’

লোকজ শিল্পীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গান গেয়ে কেউ সংসার চালাতে পারে না। অনেক শিল্পী আছেন যারা খুবই অর্থ কষ্টে আছেন। একই অবস্থা বাদ্যযন্ত্রীদেরও।

‘তাই শিল্পী ভালো হলেও পরবর্তীতে কেউ গানে থাকেন না। শিল্পী কছিম উদ্দিনরা নিবেদিত হয়ে ভাওয়াইয়া গেছেন। কিন্তু সেভাবে মূল্যায়ন পান না। ’

সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা ভাওয়াইয়া শিল্পী মুস্তাফিজুর রহমান, তার প্রচেষ্টায় আমরা সরকারের কাছ থেকে জায়গা ও ঘর পেয়েছি। সংগতি পেলে ভাওয়াইয়া গান সংরক্ষণেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘অনেক গানই হারিয়ে যাচ্ছে। একজনের গান অন্যজনের নামে লেখা হচ্ছে। আমরা তা ঠিক করে একটা আর্কাইভ করার চেষ্টা করবো,’ যোগ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্নাতক।  

জানালেন, এ পর্যন্ত কয়েক’শ আধুনিক, ইসলামী ও দেশের গান লিখেছেন তিনি। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ৮০টি গান বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়েছে।

কবিতার বইও প্রকাশ করেছেন তিনি। গান লেখার জন্যে ঢাকা থেকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ১১টি পদক পেয়েছেন বাংলা একাডেমির এ সদস্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৬
এমএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলার প্রাণের কাছে এর সর্বশেষ